শেরপুরে ১৬৪ বছরের প্রাচীন ‘মাইসাহেবা মসজিদ’, নামাজ আদায় করেন নারীরাও
Published: 26th, March 2025 GMT
শেরপুরে ১৬৪ বছরের প্রাচীন মাইসাহেবা মসজিদটি জেলা শহরে নির্মিত প্রথম মসজিদ। মসজিদটি নির্মিত হয় ১৮৬১ সালে, এর অবস্থান শহরের তিনআনী বাজার (রাজাবাড়ী) এলাকায়।
ধর্মীয় অনুভূতি, প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীমণ্ডিত মসজিদটি বর্তমানে জেলার অন্যতম প্রধান মসজিদ। শেরপুর শহরে প্রবেশের সময় এর সুউচ্চ মিনার দুটি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। বর্তমানে ৭৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদে প্রতিদিন নামাজ আদায় করেন প্রায় তিন হাজার মুসল্লি। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন শেরপুরে।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ প্রয়াত পণ্ডিত ফছিহুর রহমানের লেখা ‘শেরপুর জেলার অতীত ও বর্তমান’ বই থেকে জানা যায়, শেরপুর শহরের ভেতরে নির্মিত প্রথম মসজিদ এটি। এটি তিনআনী জমিদারবাড়ির সন্নিকটে অবস্থিত। শেরপুরের শেরীপাড়ার মিঞা সাহেবদের পূর্বপুরুষ প্রয়াত সৈয়দ আব্দুল আলীর খালা ছিলেন প্রয়াত সালেমুন নেছা বিবি। শেরীপাড়ার মিঞা বংশের লোক পুরুষ হলে তাঁকে মিঞা আর মেয়ে হলে তাঁকে মাই সাহেবা বলা হতো। সে হিসেবে সালেমুন নেছা বিবিকেও মাইসাহেবা বলা হতো। তিনিই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁরই নাম অনুসারে এই মসজিদকে মাইসাহেবা মসজিদ বলা হয়।
মাইসাহেবার (সালেমুন নেছা বিবি) নির্মিত আদি মসজিদটি ছিল ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের। তিন গম্বুজবিশিষ্ট সেই মসজিদের ছিল ৪০ ইঞ্চি পুরু ইট-সুরকির দেয়াল। এর দরজা ছিল পাঁচটি এবং দুটি কাতারে ১৮ জন করে ৩৬ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারতেন। মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পর এই মহীয়সী নারীর কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বর্ধিত মুসল্লির চাপে মসজিদটি সম্প্রসারণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ জন্য প্রথম ১৯০৩ সালে ভবনটির সম্প্রসারণ করে আরও তিনটি কাতার বাড়ানো হয়।
২০০১ সালে মসজিদটি নতুনভাবে সংস্কার করা হয়। মঙ্গলবার তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩