শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।

বুধবার (২৬ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি শ্রমিকরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শিল্প, কৃষি, নির্মাণ, গার্মেন্টস, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে উন্নতি সম্ভব হচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই দেখা যায়, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, মালিকপক্ষ তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করছে। সময়মতো পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না এবং কোথাও কোথাও আন্দোলন করলেই দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আরো পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা দিবস পালিত

ভর্তি পরীক্ষা: ঢাবির বিজ্ঞান ইউনিটে ৯৪ শতাংশই ফেল

তারা আরো বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কোনো সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। শ্রমিক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ই রাষ্ট্রের উন্নতির পথ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। অথচ যাদের ঘামে-রক্তে এই উন্নয়ন, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে—এটি চরম দ্বিচারিতা।

নেতৃবৃন্দ সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, রাষ্ট্র যদি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারে, তবে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। কেবল ভাষণ ও প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকদের জীবন চলে না। তাদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি শুধু শ্রমিকদের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় সংকট, যা মোকাবিলা করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। যদি শ্রমিকদের প্রতি এই অন্যায় চলতে থাকলে জনগণ আর চুপ থাকবে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আদায় করা শুধু একটি অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, এটি ন্যায়বিচারের প্রশ্নও বটে। শ্রমিকরা কারো কাছ থেকে কোনো দয়া চান না, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার চান। শ্রমিকরা যদি ন্যায্য অধিকার না পান, তাহলে সারাদেশে শ্রমিক আন্দোলন আরো বেগবান হবে, আর এর দায় মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রকে নিতে হবে। আমরা শ্রমিকদের পাশে আছি, থাকব। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজনে আরো বড় আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট

এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:

হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।

প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।

কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?

Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?

হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।

বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?

জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।

তাহলে বাবা-মা কী করবেন?

শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।

একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট