পিটিআই ইমরানের মুক্তি দাবিতে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ করবে
Published: 27th, March 2025 GMT
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সরকারের কাছ থেকে ইমরান খানের মুক্তির বিষয়ে কোনো ছাড় না পাওয়ায় পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে ঈদের তিন দিন কারাগারের সামনে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান এবং পিটিআই খাইবার পাখতুনখাওয়া চ্যাপ্টারের প্রধান জুনায়েদ আকবর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দলীয় কর্মীরা ঈদুল ফিতরের তিন দিনই আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ করবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়, তাহলে সরকারকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আলোচনায় তার গুরুত্ব প্রদর্শন করতে হবে।
জুনায়েদ আকবর বলেন, ‘বিরোধী জোটে সবকিছু আদর্শ নয়, তবে জোটকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তেহরিক-ই-তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তানের (টিটিএপি) দলগুলো আমাদের সমর্থন করছে। এখন আমরা সংসদের অংশ নয়, এমন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা জামায়াতে ইসলামির নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি এবং আমি আশাবাদী যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
জোট গঠন বিষয়ে পিটিআইয়ের এই নেতা আরও বলেন, দলগুলোর মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এ ধরনের ছোটখাটো বাধা জোটের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
জুনায়েদ আকবর বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পর আমরা ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করব। কিন্তু এর আগে ঈদের সময় আদিয়ালা কারাগারের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হবে।’
দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের জন্য ছাড় পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে পিটিআই। বিশেষ করে জাফর এক্সপ্রেস ঘটনার পর সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ব্রিফ করা জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় ইমরানকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইমরান খানকে কারামুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে পিটিআই। দলটির নেতারা ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা চালান; কিন্তু সরকার তাতেও অনুমতি দেয়নি। এর আগে সরকারের সঙ্গে পিটিআইয়ের আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পিটিআই আবার আন্দোলন করে সরকারকে চাপে রাখার পথে হাঁটতে শুরু করছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমর ন খ ন প ট আই সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।