ঈদে বাড়ি ফেরা হলো না মা-ছেলের, হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন বাবা
Published: 28th, March 2025 GMT
মায়ের কোলে বসে আড়াই বছরের আহনাফ কুষ্টিয়ায় ফিরছিল, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তার বাবা। আজ শুক্রবার ভোরে বগুড়া থেকে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন। প্রায় দেড় শ কিলোমিটার পথ নিরাপদে আসেন তাঁরা। বাড়ি পৌঁছানোর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘটল দুর্ঘটনা। নিমিষেই পরপারে চলে গেল আহনাফ ও তার মা। তার বাবাও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া–ঈশ্বরদী মহাসড়কে কুষ্টিয়া শহরের ত্রিমোহনী বাইপাস মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়েছে।
নিহত আহনাফ ইতি খাতুন (২৬) ও আবদুল কাদের দম্পতির ছেলে। তাঁদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের গোসালা সড়কে। আবদুল কাদের বগুড়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে আবদুল কাদের মোটরসাইকেলে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে ফিরছিলেন। ভোরে তাঁরা বগুড়া থেকে রওনা হন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ ত্রিমোহনী মোড়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রাক তাঁদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে আহনাফ ও তার মা ইতি খাতুনের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই তিনি ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান, মা ও ছেলে পাশাপাশি পড়ে আছে। বাবা পাশে বসে কাঁদছেন। তাঁর মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া হাইওয়ে ও মডেল থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকের ধাক্কায় এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঈদের ছুটিতে বগুড়া থেকে কুষ্টিয়া শহরে বাড়ি ফিরছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।