গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত
Published: 28th, March 2025 GMT
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫ টায় কাঁচপুর চাঁদমহল সিনেমা হলের পেছনে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার কার্যালয়ে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন খানের সভাপতিত্বে কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব। আরও বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার নেতা রুবেল, নবী হোসেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এরপর একটি অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ছাত্র-শ্রমিকের বুকের রক্তের বিনিময়ে এ অন্তর্বর্তী সরকার।
কিন্তু এ সরকারের সময়ও শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। এখনও দাবী আদায়ের আন্দোলনে চলছে লাঠি পেটা, হচ্ছে শ্রমিক ছাঁটাই, মিথ্যা মামলা।
আজ ঢাকায় শ্রম ভবনে ১৪ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টসের একজন শ্রমিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য অনেক বাড়লেও বাড়েনি শ্রমিকের আয়। শ্রমিক পায়নি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে ঈদ নিয়ে শ্রমিকের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ ঈদ আসলেই কেবল ভাবতে পারে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ভাল খাবার ও কিছু জামা কাপড় কেনার।
সরকার ২০ তারিখের মধ্যে বোনাস দেয়ার কথা বললেও এখনও বেশিরভাগ গার্মেন্টসে বোনাস হয়নি। মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি করে। কিছু গার্মেন্টসে হাফ বোনাস দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বোনাস না দিয়ে ৫০০/১০০০ টাকা বকশিশ দেয়। অনেকে তাও দেয় না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিকের সমান বোনাস দেয়া হয়। অথচ যাদের উৎপাদনের কারণে দেশে বৈদেশিক মূদ্রা আসে তাদের ঠিকমতো বোনাস দেয়া হয় না। শ্রমিকদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো পূর্ণ বোনাস দিতে হবে। ঈদের আগে শ্রমিকের মার্চ মাসের বেতন পাওয়া ন্যায্য।
অবিলম্বে শ্রমিকের পূর্ণ বোনাস, সকল বকেয়া ও মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে। বেতন বোনাস নিয়ে মালিকদের গড়িমসির কারণে শিল্প এলাকায় যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয় তার জন্য মালিক ও প্রশাসন দায়ী থাকবে।
কাউন্সিলে আনোয়ার হোসেন খানকে সভাপতি ও নবী হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের কমিটি নির্বাচিত হয়। কমিটির অন্যান্যরা হলেনÑসহসভাপতি রুবেল হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুমন খান, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক শাহীন মিয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুমি আক্তার আলেয়া, সদস্য মোরশেদ আলম, আল আমিন, সাইফুল ইসলাম ও আরিফ হোসেন খান।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ র ম ন টস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা