ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চল যাওয়া এখন আরও সহজ হয়েছে। তবে ঝামেলা এখন শুধু গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী বাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা চলে। মহাসড়কের দুপাশে অসংখ্য মুদির দোকান গড়ে উঠলেও ঈদের আগে অপসারণে সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে ঈদযাত্রার যানজট নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি হাইওয়ে ও জেলা পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করেন।

সরজমিনে শুক্রবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও পুলিশ তৎপর থাকলেও থেমে থেমে যানবাহন চলছে। ঈদের আগেও সওজের রাস্তা সম্প্রসারণ ও চারলেন নির্মাণের কাজ চলছে। একদিকে মহাসড়ক সংকুচিত হয়েছে। তার ওপর মহাসড়কে চার লেন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তার ওপর যত্রতত্র ওঠানামা এবং পলাশবাড়ীর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে গাইবান্ধা অভিমুখে বাস চলাচলেও কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। একই দৃশ্য গোবিন্দগঞ্জেও। সেখানেও সওজের চারলেন রাস্তা নির্মাণ কাজ চলছে। গোবিন্দগঞ্জের বাম লেন থেকে পশ্চিম দিকে দিনাজপুর অভিমুখেও চলাচল শুরু হয়েছে। সেখানেও থেমে থেমে চলছে যানবাহন। নির্মাণ কাজের কারণে হ য ব র ল অবস্থা।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার মহাসড়কে গত সাড়ে আট বছর থেকে সওজের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের কাজ চলছে। যে কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ মোড়ে কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ কারণে ঈদের আগে এই দুই স্থানেই বেশি জটলা বাঁধছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হওয়ায় ধীরগতির জটলা খুব অল্প সময় ধরেই থাকছে। 

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় আসা সাংবাদিক বাবু ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফিরতে সাভারে একটু সমস্যা আছে। সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা এবং গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ ছাড়া কোনো স্থানেই তেমন সমস্যা নেই।’

ঢাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এইচএম তৌহিদুজ্জামান ইমন বলেন, ‘আজ শুক্রবার সকাল পৌনে দশটায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে মাত্র ৭ ঘণ্টায় ঘোড়াঘাট এসেছি। ঢাকার চন্দ্রা ও নবীনগর এলাকায় ধীরগতি এবং যানজট ছিল। রাস্তা নির্মাণ কাজের জন্য গোবিন্দগঞ্জে অল্প সময়ের জন্য সমস্যা হয়েছিল। পথে সিরাজগঞ্জ বা বগুড়ার জেলায় কোনো সমস্যা হয়নি।’

যমুনা সেতু পশ্চিম থানার ওসি আনারুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘শুক্রবার দিনভর ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনে ঘরমুখো যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। সেতুর পশ্চিম পারে যানবাহনের ধীরগতি বা যানজট ছিল না।’

ওই মহাসড়কের কড্ডা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থানরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আহসান বলেন, ‘যানবাহনের চাপ বাড়লেও দিনভর কোনো জটলা ছিল না।’

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘রংপুর বিভাগের প্রবেশদ্বার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ী এলাকার মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স রয়েছে। সড়কের মাঝে ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায় যান চলাচলে কিছুটা সমস্যা হলেও কোনো যানজট নেই।’

মহাসড়কের দুই পাশে সিএনজি, অটোরিকশা ও ফুটপাথ দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এসব থ্রি হুইলার গাড়ির নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় মহাসড়কের পাশে দাঁড়ায়। আমরা তাদের সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে দিয়েছি। মহাসড়কে উঠতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।’

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিয়াস কুমার সেন বলেন, ‘হাইওয়ের কাজ করছে সাসেক-২ প্রকল্প। তাদের কাজ এখনও চলমান। আমাদের কাছে সড়ক বুঝিয়ে দেওয়ার পর রাস্তার পাশের অবৈধ স্থাপনাসহ সড়কের সার্বিক দেখভাল করবে গাইবান্ধা সড়ক বিভাগ।’

বগুড়া রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশের এসপি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো.

শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা রংপুর মহাসড়কের আমাদের অংশে শুক্রবার দিনভর কোনো যানজট হয়নি। বরং ঢাকা-উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন দুই লেন দিয়েই স্বাভাবিকভাবে চলছে।’ 

সওজের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক কো-অপারেশন ( সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ড. ওয়ালিউর  রহমান বলেন, ‘সাড়ে আট বছর আগে কাজ শুরু হলেও মূলত জোরেশোরে কাজ শুরু হয় করোনা মহামারি শেষে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ভূমি অধিগ্রহণ কাজের জটিলতার জন্য গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীতে কাজ শুরু করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ হবে। আগামী বছর থেকে চার রাস্তা সম্প্রসারণের সুফল উত্তরাঞ্চলবাসী পুরোপুরি ভোগ করতে পারবে।’

যমুনা সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিবিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের ৩৫ হাজার ২২৭টি যানবাহন (বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল ও হালকা বাহন) যমুনা সেতু পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৬৫ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। গত দিনে ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৭০০ ৬৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে৷ গত দিনে টোল আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা। গতদিনের তুলনায় ১ হাজার ৪৬১টি যানবাহন বাড়লেও টোল আদায় ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা কমেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট গ ব ন দগঞ জ শ ক রব র ক জ চলছ ন বল ন ধ রগত সমস য সওজ র সড়ক র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ