চিনি না, জানি না, এমন মানুষদের সঙ্গে খেয়েছি একথালায়
Published: 30th, March 2025 GMT
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়ার মহাকাশবিজ্ঞান বিভাগে পড়েছি। সেই সুবাদে মালয়েশিয়ার রোজা-ঈদ কাছ থেকে দেখা হয়েছে।
মালয়েশিয়াতে রোজার প্রথম দিন থেকেই আতশবাজি ফুটানো হয়। মসজিদে ইফতারের ব্যবস্থা থাকে। মালয়েশিয়ায় আমার প্রথম রোজা কেটেছিল করোনা-পরবর্তী সময়ে। তখন অবশ্য মসজিদে ইফতার হতো না। খাবার প্যাকেট করে দিয়ে দিত। একা একা ইফতার করতে খারাপ লাগত। পরিবারের অভাব বোধ করতাম। রোজার শেষ ১০ দিন আমার জন্য ছিল আরও কঠিন। কোনো কেনাকাটা নাই, দেশি পোশাক খুব বেশি পাওয়া যায় না। বাঙালি কমিউনিটি মাঝেমধ্যে ইফতারের আয়োজন করত, সেই সময়টা উপভোগ করতাম।
২০২৩ সালের রোজার সময়টা অনেক ভালো ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে ইফতার করতাম। বেশির ভাগ সময় ভাত, মুরগি অথবা গরুর মাংস দেওয়া হতো। সেগুলো আবার পাঁচজন একসঙ্গে খেতাম। এটা আমার কাছে অনেক মজার ছিল—চিনি না, জানি না, পরিচয় নেই অথচ এক থালায় বসে ইফতার করছি! ঈদের নামাজও বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে পড়েছি। এটা ছিল অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। কারণ, সেবারই প্রথম ঈদের নামাজ মসজিদে পড়ি। বাসায় এসে রান্না করি। একা কিছু খেতে ইচ্ছা করছিল না। বিরক্ত লাগছিল। দেরি না করে ল্যাবে চলে গেলাম। সেখানে কফি খাওয়া, জার্নাল লেখা, গবেষণা প্রবন্ধ পড়া একসঙ্গে চলল।
প্রথমবার যখন ঈদের সময়টা ল্যাবে কাটাই, একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। পরেরবার সবকিছু অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমার কাজের নির্দিষ্ট সময় ছিল না। কাজ করতে করতে অনেক সময় আট-নয় ঘণ্টা পার হয়ে যেত। আবার, মাঝেমধ্যে রাতেও থাকতাম। রোজার সময় বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকা হতো। আমি মূলত মহাকাশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস (স্পেস ওয়েদার ফোরকাস্ট) নিয়ে কাজ করতাম। সারা দেশের মানুষ যখন চাঁদ দেখা না–দেখার রোমাঞ্চে বুঁদ, তখন চাঁদের মতো আরও বহু গ্রহ-উপগ্রহের দুনিয়া নিয়ে গবেষণায় ডুবে থাকারও একটা আলাদা আনন্দ আছে।
বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের (স্পারসো) গবেষণা সহকারী সাদিয়া মোস্তফা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
আগামী ২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। সভায় অনুমোদন হলে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ শুক্রবার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের সভার এ তারিখ নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ পর্ষদের বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে বিশেষত টাকা–ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে। বাড়তি ঋণ যোগ হলে মোট দাঁড়াবে ৫৪০ কোটি ডলার। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।