গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় স্থানীয় মুসল্লিদের বাধায় একটি নাটকের মঞ্চায়ন বাতিল করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘ মাঠে ‘আপন দুলাল’ নামের নাটকটি মঞ্চায়িত হওয়ার কথা ছিল।

আয়োজক রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘ জানিয়েছে, মাসখানেক ধরে ‘আপন দুলাল’ নাটক মঞ্চায়নের জন্য রিহার্সেল চলেছে। রানীগঞ্জ উদয়ন সংঘ মাঠে ৫২ বছর ধরে স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের আয়োজনে নাটক, গীতিনাট্য, পালাগানের মঞ্চায়ন হয়ে আসছিল। এটি ছিল ৫২তম আসর।

নাটক আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় নাট্যকর্মী খন্দকার শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাতে তাঁরা বাজারে বসেছিলেন। এ সময় সেখানে রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মো.

আজিজুল হক, মসজিদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলামসহ কয়েকজন মুসল্লি এসে তাঁদের নাটক মঞ্চায়ন করতে নিষেধ করেন। চিরদিনের জন্য এখানে নাটক বন্ধ রাখার কথা বলেন। এরপর নাটকের জন্য তৈরি মঞ্চ ও প্যান্ডেল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার মধ্যে ডেকোরেটরের লোকজন খুলে নিয়ে যান।

খন্দকার শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, ‘আপন দুলাল একটি গীতিনাট্য। এটি নারী চরিত্রবর্জিত একটি নাটক। এতে নারীর কোনো অভিনয় নেই। পরিশীলিত নাটক। অথচ এই নাটকটি মঞ্চে গড়াতে দেয়নি তারা। এত দিনের প্রস্তুতি, শ্রম, উদ্যোগ সব ভেস্তে গেল।’

এ প্রসঙ্গে রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মো. আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাজে একটি খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নাটক আয়োজক কমিটিকে সেটি অনুষ্ঠিত না করার জন্য অনুরোধ করে। তারাও সমাজের ভালোর জন্য শেষ পর্যন্ত সেই নাটক অনুষ্ঠান করেননি। এখানে এককভাবে কেউ নিষেধ করেনি। স্থানীয় মুসল্লি ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে আয়োজকদের অনুরোধ করেছেন।’

রানীগঞ্জ বাজার মসজিদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সমাজের মুসল্লি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নাটক বন্ধ করে দিয়েছি। শুধু রানীগঞ্জ নয়, পুরো দুর্গাপুর ইউনিয়নে আর কখনো কোনো নাটক অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব করলে সমাজে খারাপ প্রভাব পড়ে।’

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাটক আয়োজক কিংবা বাধা প্রদানকারী কোনো পক্ষই থানায় এ প্রসঙ্গে কিছু জানায়নি। আমার এ বিষয়ে জানা নেই।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক আপন দ ল ল মসজ দ র র জন য র ন টক

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ