ট্রাম্পের শুল্ক আরোপে কোন কোন পণ্যে পকেট কাটা যাবে মার্কিনদের
Published: 5th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ এনে দিতে বিশ্বজুড়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শুল্কের খড়্গ চাপিয়েছেন, তার ধাক্কা সামলাতে হবে মার্কিনদেরও। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেসব দেশ থেকে নিয়মিত পণ্য কিনে থাকে, সেসব দেশের প্রায় সবাই দেশটিতে রপ্তানি করা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে পোশাক থেকে শুরু করে কফি—সবকিছুতেই বাড়তি অর্থ গুনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশটিতে প্রবেশ করা শত শত কোটি ডলারের পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘সবচেয়ে খারাপ’ বলে বিবেচনা করেছেন, সেসব দেশের ওপর তিনি চাপিয়েছেন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের বোঝা। আজ ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হচ্ছে তাঁর ওই ঘোষণা।
অর্থনীতিবিদেরা ট্রাম্পের এ নতুন শুল্ক ঘোষণা ও এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা পণ্যের ওপর কোনো কোনো দেশের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘটনায় সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। পাল্টাপাল্টি এমন শুল্কারোপে বিশ্বজুড়ে মার্কিনদের জন্য তৈরি করা পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এটি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরম পাওয়েল।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার জেরে বিদেশি পণ্যের মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কের বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বা পণ্যের আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে।অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার জেরে বিদেশি পণ্যের মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কের বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বা পণ্যের আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। এতে যেসব নিত্যপণ্যে মার্কিনদের বাড়তি অর্থ গুনতে হতে পারে, সেসবের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
পোশাক
পোশাকের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কের ধাক্কা লাগবে ভিয়েতনাম, চীন ও বাংলাদেশের মতো পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে, সে তালিকায় প্রথম পাঁচটির তিনটিই হলো এই তিন দেশ। তাদের পণ্যের ওপর ৩৪ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে বিশ্বজুড়ে মার্কিনদের জন্য তৈরি করা পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এটি মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।জেরম পাওয়েল, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যানপোশাক রপ্তানিকারক এই তিন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করার অর্থ হলো, টার্গেট ও ওয়ালমার্টের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোসহ পোশাক খাতের পরিচিত আরও কিছু ব্র্যান্ড আর্থিকভাবে চাপ অনুভব করতে পারে। সুলভ মূল্যে পছন্দের পোশাক কিনতে প্রায়ই এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে থাকেন মার্কিন ভোক্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্যাপ। খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওল্ড নেভি, ব্যানানা রিপাবলিক ও অ্যাথলেটাও পরিচালনা করে থাকে গ্যাপ। বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্যাপের ২১ শতাংশ পোশাকের উৎস ভিয়েতনাম। এ ছাড়া আরও ৩৭ শতাংশ পোশাক আসে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ থেকে। এ বিশ্লেষণ ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারের ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক শেং লুর।
আবার এইচঅ্যান্ডএম সস্তা ফ্যাশনের জন্য সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি অধিকাংশ পোশাক কিনে থাকে চীন ও বাংলাদেশ থেকে।
বুধবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে বলেছে, নতুন শুল্ক মার্কিন পরিবারগুলো, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর অযৌক্তিক বোঝা চাপাতে পারে।
ইতিমধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক বোঝা এড়াতে ভিয়েতনাম মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তিতে আসতে কাজ করার জন্য তৈরি। অন্যদিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
কফি ও আমদানি করা অন্যান্য খাদ্যপণ্য
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা নিত্যদিন যে কফি পান করে থাকেন, তার প্রায় সম্পূর্ণটা আসে দেশটির বাইরে থেকে। এর অর্থ হলো, মার্কিনরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসাবাড়িতে বা দোকানে গিয়ে কফি পান করতে গেলে এখন থেকে বড়সড় অর্থ তাঁদের গুনতে হতে পারে, যা তাঁদের মানিব্যাগে চাপ বাড়াবে।
কফির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত ব্রাজিল ও কলম্বিয়ার ওপর নির্ভর করে। দেশ দুটির ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট কিছু কফির গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক দেশের একটি ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা নিত্যদিন যে কফি পান করে থাকেন, তার প্রায় সম্পূর্ণটা আসে দেশটির বাইরে থেকে। এর অর্থ হলো, মার্কিনরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসাবাড়িতে বা দোকানে গিয়ে কফি পান করতে গেলে এখন থেকে বড়সড় অর্থ গুনতে হতে পারে, যা তাঁদের মানিব্যাগে চাপ বাড়াবে।সান ফ্রান্সিসকো–ভিত্তিক কফি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান গ্রাফিউর স্বত্বাধিকারী ওয়াল্টার হ্যাস ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, যেদিন শুল্ক কার্যকর হবে, আক্ষরিকভাবে পরদিন থেকেই তাঁর প্রতিষ্ঠানকে এর ধাক্কা সামলাতে হবে। বাড়তি শুল্ক বহাল থাকলে কফির দাম বাড়বে এবং ভোক্তাদের তা পরিশোধ করতে হবে।
একই রকম পরিণতি বরণ করতে হতে পারে অলিভ অয়েলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানিকারক মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এসব পণ্য ইতালি, স্পেন, গ্রিসসহ বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো থেকে এসে থাকে। ইইউর পণ্যে ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
জুতা-অ্যাডিডাস থেকে নাইক
যুক্তরাষ্ট্রবাসীর নিত্যদিনের ব্যবহার্য পণ্যের একটি জুতা। জনপ্রিয় ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস থেকে শুরু করে নাইকের জুতা কিনতে সামনের দিনগুলোতে তাঁদের বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের বিক্রি করা পণ্যের জন্য এশীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে। নাইকের জুতার প্রায় অর্ধেক ও অ্যাডিডাসের ৩৯ শতাংশ তৈরি হয় ভিয়েতনামে।
অধ্যাপক লুর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বেশি জুতা আমদানি করেছে; এর অধিকাংশ এসেছে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে। এ পণ্যের ওপর এত দিন শুল্ক ছিল প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। তা এখন প্রায় তিন গুণ বাড়তে পারে।
অ্যালকোহল, ইউরোপীয় ওয়াইন ও বিয়ার
যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াইন সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস দেশগুলোর একটি ফ্রান্স। ইইউর ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করায় ওয়াইন আমদানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো।
দ্য বোরগোগন ওয়াইন বোর্ড বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ওয়াইন রপ্তানিকারক ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই ‘এক গুরুতর ধাক্কা’।
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তে পারে অ্যালকোহল ও বিয়ারের দামও।
আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান হতে পারে২২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপে বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে যে দেশ২০ ঘণ্টা আগেইউবিএসের বিশ্লেষকেরা রয়টার্সকে বলেছেন, শুল্কের ধাক্কা সামলাতে অ্যালকোহলের বড় বিক্রেতারা তাঁদের পণ্যের দাম ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারেন।
এদিকে আইফোন, মুঠোফোন, টেলিভিশন, ভিডিও গেমিং উপকরণসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের দামও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা। যুক্তরাষ্ট্রে এসব পণ্যের বড় রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
আরও পড়ুনচীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সতর্ক করলেন ট্রাম্প ৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের তালিকায় রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার নাম নেই কেন০৩ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ক ম র ক নদ র নত ন শ ল ক সব দ শ প ন কর র জন য আমদ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।