৪০ বছর ইমামতির পর ফুলসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে ইমামের রাজকীয় বিদায়
Published: 5th, April 2025 GMT
নাটোরের লালপুরে ৪০ বছর ইমামতি করার পর ফুলে ফুলে সজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে একটি মসজিদের ইমামকে রাজকীয়ভাবে বিদায় দেওয়া হয়েছে। লালপুরের গোসাইপুর-মিল্কিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম জিল্লুর রহমানকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফুলসজ্জিত গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় গ্রামের নারী-পুরুষের কান্নায় এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
৭০ বছর বয়সী ইমাম জিল্লুর রহমান উপজেলার আড়বাব গ্রামের সোবহান মোল্লার ছেলে। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে টানা ৪০ বছর ধরে গোসাইপুর-মিল্কিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সম্মানে এ ব্যতিক্রমী বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এলাকাবাসী।
মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ফুলসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে তাঁকে আড়বাব গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই গাড়ির পেছনে ছিল গ্রামের যুবকদের মোটরসাইকেলের বহর। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ ইমামকে বিদায় জানাতে রাস্তার দুই পাশে ভিড় করেন।
বিদায়ের সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে সালাম বিনিময় করছেন ইমাম জিল্লুর রহমান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি
‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’
অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’
একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’
খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’
ঢাকা/তারা