মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত জেলা যুবদলের সদস্য মিরান হোসেন (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

গত ৩০ মার্চ রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন মৃত সুলতান মুন্সির ছেলে মিরান হোসেন। তিনি মাগুরা জেলা যুবদলের সদস্য ছিলেন।

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নাকোল মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন একই গ্রামের বাসিন্দা গ্রাম্য মাতবর জামিরুল ইসলাম ওরফে ধলা। নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে এলেও জামিরুল মসজিদের আয়–ব্যয়ের হিসাব ঠিকমতো প্রকাশ করতেন না। বিষয়টি নিয়ে যুবদল নেতা মিরান হোসেন প্রতিবাদ জানালে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। ঈদের পরদিন মসজিদের হিসাব নিয়ে বসার কথা ছিল দুই পক্ষের। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগের রাতে নাকোল বাজার চৌরাস্তায় জামিরুল ইসলামের লোকজনের সঙ্গে যুবদল নেতা মিরান হোসেনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেলা কাঠ দিয়ে মিরান হোসেনের মাথায় আঘাত করেন জামিরুল ইসলামের লোকজন। এতে গুরুতর আহত হন মিরান। ওই রাতে প্রথমে তাঁকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাঁকে ঢাকায় নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে মারা যান তিনি।

আজ রোববার সকালে শ্রীপুরের নাকোল মধ্যপাড়া মিরান হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় মরদেহ তখনো বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানান হয়, ময়নাতদন্ত শেষে আজ মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।

মিরান হোসেনের চাচাতো ভাই শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মিরানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হলো। সেদিন চাঁদ রাতে বাজারে সবার সামনে জামিরুল ইসলাম, তাঁর দুই ছেলে ইমন, ইকবাল, ভাতিজা রবিউল ইসলাম, মুন্না, জিন্নাসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে হামলা চালান। সবার সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, যুবদল নেতা মিরান হোসেনের দুই মেয়ে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর বড় ভাই শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ, মেজ ভাই কয়েক বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন। ফলে পুরো পরিবার ওই একজনের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

এদিকে যুবদলের ওই নেতার মৃত্যুর খবরে গতকাল রাতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। রাত ১০টার দিকে নাকোলে অভিযুক্ত জামিরুল ইসলামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাঁর বাড়ির কয়েকটি ঘর পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামিরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। জামিরুল ইসলামের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

মাগুরার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, কেউ গ্রেপ্তারও হননি। তবে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তাঁরা দ্রুতই মামলা করবেন। ওই নেতার মৃত্যুর খবরে রাতে বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম র ল ইসল ম র য বদল ন ত মসজ দ র পর ব র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা