মসজিদের হিসাব নিয়ে বিরোধ: মাগুরায় হামলায় আহত যুবদল নেতার মৃত্যু
Published: 6th, April 2025 GMT
মাগুরায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত জেলা যুবদলের সদস্য মিরান হোসেন (৪৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গত ৩০ মার্চ রাতে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল বাজারে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন মৃত সুলতান মুন্সির ছেলে মিরান হোসেন। তিনি মাগুরা জেলা যুবদলের সদস্য ছিলেন।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নাকোল মধ্যপাড়া জামে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন একই গ্রামের বাসিন্দা গ্রাম্য মাতবর জামিরুল ইসলাম ওরফে ধলা। নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে এলেও জামিরুল মসজিদের আয়–ব্যয়ের হিসাব ঠিকমতো প্রকাশ করতেন না। বিষয়টি নিয়ে যুবদল নেতা মিরান হোসেন প্রতিবাদ জানালে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। ঈদের পরদিন মসজিদের হিসাব নিয়ে বসার কথা ছিল দুই পক্ষের। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের আগের রাতে নাকোল বাজার চৌরাস্তায় জামিরুল ইসলামের লোকজনের সঙ্গে যুবদল নেতা মিরান হোসেনের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেলা কাঠ দিয়ে মিরান হোসেনের মাথায় আঘাত করেন জামিরুল ইসলামের লোকজন। এতে গুরুতর আহত হন মিরান। ওই রাতে প্রথমে তাঁকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাঁকে ঢাকায় নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাতে মারা যান তিনি।
আজ রোববার সকালে শ্রীপুরের নাকোল মধ্যপাড়া মিরান হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় মরদেহ তখনো বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে জানান হয়, ময়নাতদন্ত শেষে আজ মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।
মিরান হোসেনের চাচাতো ভাই শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মিরানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হলো। সেদিন চাঁদ রাতে বাজারে সবার সামনে জামিরুল ইসলাম, তাঁর দুই ছেলে ইমন, ইকবাল, ভাতিজা রবিউল ইসলাম, মুন্না, জিন্নাসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে হামলা চালান। সবার সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, যুবদল নেতা মিরান হোসেনের দুই মেয়ে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর বড় ভাই শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ, মেজ ভাই কয়েক বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছেন। ফলে পুরো পরিবার ওই একজনের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
এদিকে যুবদলের ওই নেতার মৃত্যুর খবরে গতকাল রাতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। রাত ১০টার দিকে নাকোলে অভিযুক্ত জামিরুল ইসলামের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তাঁর বাড়ির কয়েকটি ঘর পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামিরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। জামিরুল ইসলামের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
মাগুরার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, কেউ গ্রেপ্তারও হননি। তবে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তাঁরা দ্রুতই মামলা করবেন। ওই নেতার মৃত্যুর খবরে রাতে বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম র ল ইসল ম র য বদল ন ত মসজ দ র পর ব র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।