হিল্লা বিয়ে করে মেলামেশার পর ফরজ গোসলের এক ফোটা পানির সাথে ৭০টি ফেরেস্তা থাকে এবং একটি শহীদের মর্যাদা পাওয়া যায়। এমন ফতোয়া নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সোমবাড়িয়া বাজার জামে মসজিদের ইমামকে নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

ইমাম মাওলানা আতিকুল্লাহ তার মসজিদের মোয়াজ্জেম হাফেজ শরীফ উদ্দিনকে এমন ফতোয়া দিয়ে হিল্লা বিয়ে করার জন্য ফুসলানো ও পরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার থেকে এ বিষয়টি নিয়ে এখারায় গুঞ্জন শুরু হলে  রোববার (৬ এপ্রিল) এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ঝড় বইতে থাকে। 

এমন বির্তকিত ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকায় ইমামের পক্ষে-বিপক্ষে দু’টি গ্রুপ মুখমোখি অব্স্থান নিয়েছে। যে কোন সময় সংঘাতে লিপ্ত হতে পারে এলাকাবাসী। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের লক্ষনখোলা নাসিক ২৫নং ওয়ার্ডের সোমবাড়িয়া বাজার জামে মসজিদটি সোহাগপুর টেক্সটাইল মিল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। মিলের অর্থায়নে ইমাম-মোয়াজ্জেমের বেতন ভাতা দেয়া হয়। তবে এ মসজিদে নামাজ আদায় করেন স্থানীয় মুসল্লীরা।

এ মসজিদের ইমাম মাওলানা আতিকুল্লাহ তার মসজিদের মোয়াজ্জেমকে হিল্লা বিয়ের জন্য চাপ দেয়। মোয়াজ্জেম তাতে রাজি না হলে তাকে হাদিয়া দেয়ার প্রলোভন দেখায়। তাতেও রাজি না হলে তাকে ফতোয়া দিয়ে রাজি করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাকে হুমকি দেন এ কথা কাউকে বললে তার চাকরি থাকবে না।

চাকুরি হারানোর ভয়ে সে দীর্ঘ ৮ মাস এ কথা গোপন রাখে। সে থেকে ইমাম এ মসজিদ থেকে মোয়াজ্জেমকে তাঁড়ানোর জন্য নানা ফন্দি আটতে থাকে।

কোম্পানীতে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে সে এ কথা সোমবাড়িয়া বাজার কমিটিকে জানালে সাথে সাথে বিষয়টি মুসল্লীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। 

এ ব্যপারে মোয়াজ্জেম হাফেজ শরীফ উদ্দিন জানান, তাকে একটি হিল্লা বিয়ের জন্য তার মসজিদের ইমাম আতিকুল্লাহ চাপ প্রয়োগ করে। তাকে হাদিয়া দেয়ার প্রলোভন দেখায় এবং বলে হিল্লা বিয়ে করে মেলামেলার পর ফরজ গোসল অনেক ছোয়াবের।

গোসলের এক ফোটা পানির সাখে ৭০ ফেরস্তা থাকে অনেক নেকী পাওয়া যায় ও একটি শহীদের মর্যাদা পাওয়া যায়। 

তাকে বলে তুই একরাম ফুর্তি করবি। মনে করবি তোর নাইটপ্রেসার হয়েছে। ইমামের কথায় সে ইমামকে বলেছেন, আমি নতুন বিয়ে করেছি আমি আমার স্ত্রীর হক কাউকে দিতে পারবোনা। এতে ইমাম ব্যর্থ হলে তাকে অন্য কাউকে সংগ্রহ করে দিতে বলে। 

অবশেষে তার চাকুরির কথা চিন্তা করে মাদ্রসা ছাত্র ইমরান হোসেন তার এক বন্ধুকে ইমামে কাছে নিয়ে এলে ইমামের প্রলোভেনে সেই মাদ্রসা ছাত্র রাজি না হওয়ায় ইমাম তার মোয়াজ্জেমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। 

এ ব্যপারে ইমাম মাওলানা আতিকুল্লাহর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি ৮ মাস পূর্বের। চৌড়াপাড়া বড় মসজিদের ইমাম প্রয়াত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ নাকি তাকে হিল্লা বিয়ের জন্য একজন লোক যোগাড় করে দিতে বলেছিলেন। তাই আমি সরল মনে তার মসজিদের মোয়াজ্জেমকে বলেছিলেন। 

মোয়াজ্জেম রাজি না হওয়ায় তিনি স্থানীয় একজনকেও রাজি করাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেহ রাজি না হওয়ায় এ বিষয়টি সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। 

এ ব্যপারে এলাকাবাসীর পক্ষে ব্যবসায়ী নূরু জানান, এ মসজিদের ইমাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বির্তকিত কথা বলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের হৃদয়ে আঘাত করে। তার এমন ফতোয়া এলাকায় বিশৃঙ্খলা  সৃষ্টি হচ্ছে তাই আমি এলাকার ন্বার্থে থানায় অভিযোগ দায়ের করি যাতে প্রশাসন বিষয়টি হস্তক্ষেপ করে এবং এলাকায় শান্তির পরিবেশ বজায় থাকে। 

এ ব্যপারে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পদক শাহজালাল বলেন, হিল্লা বিয়ের বিষয়টি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে এখন কেন কথা উঠবে? মোয়াজ্জেমকে এই ইমাম চাকুরি দিয়েছে। এখন ইমামের কথা সে শুনেনা তাই ইমাম তার প্রতি একটু রাগারাগি করায় সে ইমামের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রভাকান্ডা ছড়াচ্ছে। 

আর একটি গ্রুপ রয়েছে যারা এ মসজিদের বিপক্ষে দীর্ঘ ১৬ বছর ছিল তারাই আবার এ মসজিদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তবে মিল কর্তৃপক্ষ ইমামকে কিছু দিনের ছুটি দিয়েছে এলাকার পরিবেশ শান্ত হওয়ার জন্য। আর মোয়াজ্জেমকে অন্য মসজিদে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

এ ব্যপারে বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ নেয়া হয়েছে। লাঙ্গলবন্দে স্নান উৎসবে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় তদন্তে যেতে পারেনি। এখন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: মসজ দ ন র য়ণগঞ জ ত র মসজ দ র এল ক ব স য় র জন য এ মসজ দ এল ক য় ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে

সরকারের ওপর তিনভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝারি মাত্রায় আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানখাত সম্পর্কিত বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে- সম্মিলিতভাবে এসওই খাত দেশের সরকারের জন্য মাঝারি মাত্রার ফিসকাল ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এসওই এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিকভাবে সরকারের আর্থিক অবস্থার ওপর তিনভাবে প্রভাব ফেলে।

প্রথমত, যদি এসওই-এর ঋণের জন্য গ্যারান্টি দেয় এবং তারা সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকারের তা পুনর্ভরণসহ আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। এটি ঘটতে পারে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে যায় বা তাদের প্রকল্পগুলো আশানুরুপ উৎপাদশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি না হলেও যদি তারা ক্রমাগত লোকসান করে, তাহলে তাদের সচল রাখতে সরকারকে বাড়তি পুঁজি যোগান দিতে হতে পারে।

তৃতীয়ত, যদি এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পারে তাহলে সেটিও সরকারের রাজস্ব আয়ে চাপ বাড়াতে পারে। সার্বিকভাবে দেখা গেছে যে, এসওই সমূহের সম্পদকে সুচিন্তিতভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন, যাতে সর্ব্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা যায়।

এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারকে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে আট ধরণের নীতি কৌশল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এই নীতি কৌশলের মধ্যে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সরকার ওএমএস (খোলা বাজারে খাদ্য পণ্য বিক্রি) টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডের মতো কর্মসূচি চালু করেছে। সরকার ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরির মাধ্যমে উপকারভোগীর সহায়তাপ্রাপ্তি ব্যবস্থা পূর্ণ অটোমেশন করার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিদ্যুৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে নীতি কৌশলে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ২০২৬ -২০২৭ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে  বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ভর্তুকি কমিয়ে এখাতকে আর্থিকভাবে টেকসই করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সার ব্যবস্থাপনা পুনঃমূল্যায়ন করছে এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণের প্রাপ্যতা ও সরবরাহে যেনন কোনো বিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করছে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও আর্থিক ঝুঁকি কমাতে সরকার অর্থ বিভাগের অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং বন্ড/বিল বাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

নীতি কৌশলের বিষয়ে আরও রয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জোরদারে সরকার আর্থিক লেনদেনের অটোমেশন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ‘মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল(এমএলটিআরএস,২০২৫)’ ও ‘ট্যাক্স এক্সপেন্ডিচার নীতিমালা’ গ্রহণ করা হয়েছে।  এসব কাঠামোগত সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যকর করার মাধ্যমে সরকার ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য দক্ষ এসেট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে মধ্যমেয়াদে বিভিন্ন ঝুঁকি অর্থায়নের উত্তম বিকল্পের মূল্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সামগ্রিক দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং সাড়া প্রদান কৌশল তৈরি করা যেতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের নীতি বিবৃতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ