ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে জবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি
Published: 6th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান নৃশংস হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া মুসলিম নেতাদের প্রতি নিরীহ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি এবং হামাস ঘোষিত ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড জেনারেল স্ট্রাইক’ আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন ও সম্মান জানিয়ে এ ঘোষণা দেন তারা।
এ বিষয়ে ওয়ারিয়র্স অব জুলাই এর সহ-মুখপাত্র এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “আপনারা জানেন দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনে যে নৃশংস হামলা, গণহত্যা মার্কিন মদদে হচ্ছে, তা লক্ষণীয়। সর্বশেষ নতুন করিডোর ‘মোরাগ’ এর মধ্যে দিয়ে গাজা নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আগামীকাল বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ জানাব। সবাইকে যোগদান করার আহ্বান রইল।”
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম আর্বতনের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এমকেএম রাকিব বলেন, “গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলি নৃশংসতায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, সে যে কোনো ধর্মের হোক না কেন। একজন মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে এ অমানবিকতা সহ্য করতে পারবে না। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুতই ইসরায়েলের এ হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেবেন এবং সরকারিভাবে ইসরায়েলি পণ্যের বিকল্প পন্থা অবলম্বন করবেন।”
অন্যদিকে, এ বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করে ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জবি শিক্ষক সমিতি। এছাড়া আগামীকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “গাজায় মুসলমানদের ওপর এ বর্বরোচিত হামলা সহ্য করা যায় না। আমরা গাজাবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এ কর্মসূচি নিয়েছি। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের এ উদ্যোগে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)