ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগামীকাল সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা। এই ডাকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে আগামীকাল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আগামীকাল বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে সংহতি সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। তারা আগামীকাল বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংহতি ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এক বার্তায় প্ল্যাটফর্মটি এ কর্মসূচির কথা জানিয়েছে।

প্ল্যাটফর্মটির বার্তাপ্রেরক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, ‘ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালন হচ্ছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান থাকছে।’

এ কর্মসূচি সফলের আহ্বান জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তায় আগামীকাল সারা দেশে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা এই ধর্মঘট সফল করুন। আগামীকাল বাংলাদেশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন না চালু হয়, কোনো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না হয়, তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।’

আজ রোববার দুপুরে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনের’ দুই সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও এ বি যুবায়েরও এ কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান।

এক ফেসবুক পোস্টে এ বি যুবায়ের বলেন, ‘আগামীকাল বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের মজলুম গাজাবাসী ভাইবোনেরা। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, অফিস ও আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামীকাল সারা দিন বাংলাদেশেও সাধারণ ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। আগামীকাল আপনারা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অফিস-আদালত বন্ধ রাখুন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করুন। চলুন বৈশ্বিকভাবে একযোগে দাবি জানাই, ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন।’

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক২ ঘণ্টা আগে

এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, আরবি বিভাগ, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ফলিত গণিত, মনোবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ অনেকগুলো বিভাগ এ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। তারা আগামীকালকের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী