গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
Published: 7th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিশ্বব্যাপী ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংহতি প্রকাশ করে আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। আগামীকালকের স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি পরবর্তীতে জানানো হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দুপুর থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক বিভাগ থেকে ক্লাস বর্জন করে স্পষ্ট বিবৃতি দেওয়া হয়। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ইসলামিক স্টাডিজ, যোগাযোগ বৈকল্য, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, মনোবিজ্ঞান, আরবি, সমাজবিজ্ঞান, আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফিন্যান্স, চারুকলা অনুষদসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চেয়ে মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এরপর তারা ফিলিস্তিনের শহীদদের জন্য গায়েবানা জানাজা আদায় করেন। মিছিল থেকে ইসরায়েল নিপাত যাওয়ার স্লোগান দেন তারা।
আগামীকাল বিকেল ৪ টায় ফিলিস্তিনের গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং স্বাধীনতার দাবিতে সমাবেশ আহ্বান করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে বিকেল ৪টায় সংহতি এবং বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)