নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলটির নেতা-কর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ আরও প্রকট হয়েছে। ঘোষিত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে এরই মধ্যে বিএনপির দুটি পক্ষ দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তবে কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দমিছিল করেছে দলের একটি পক্ষ।
কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি পালন করা নেতা-কর্মীদের দাবি, ১৬ বছর ধরে রাজপথে থেকে যাঁরা হামলা-মামলার স্বীকার হয়েছেন তাঁদের গুরুত্ব না দিয়ে হঠাৎ স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এক নেতার অনুসারীদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে উপজেলা কমিটিতে সদ্য পদ পাওয়া দুই নেতাকে।
৮ সেপ্টেম্বর রাতে সেনবাগ উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেনবাগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান এবং সৌদি আরব বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের অনুসারী তিনটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে আবদুল মান্নানের অনুসারীরা বেশি পদ পেয়েছেন। তাই কমিটি নিয়ে সন্তুষ্ট তাঁরা। তবে তুলনামূলক কম পদ পাওয়ায় কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী পক্ষটি কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি পালন করে আসছে। জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারীদের মধ্যে পদ পাওয়াদের একটি অংশ কমিটির পক্ষে থাকলেও পদবঞ্চিতরা কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উপজেলা বিএনপির ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মোক্তার হোসেন পাটোয়ারীকে। তিনি জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারী। ৫৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব করা হয় আবদুল মান্নানের অনুসারী আনোয়ার হোসেনকে। ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় জাহাঙ্গীর হাসান চৌধুরীকে। তিনি কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী।
অনেক যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছি। কে কার অনুসারী—সেটা বিচার না করে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যোগ্য ব্যক্তিদের নামই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেইমাহবুব আলমগীর, আহ্বায়ক, জেলা বিএনপিপৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে ভিপি মফিজুল ইসলামকে। তিনি সৌদি আরব বিএনপির নেতা মান্নানের অনুসারী। ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে শহীদ উল্যাকে। আর ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ফারুক বাবুলকে। তাঁরা দুজনই বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারী।
কমিটি নিয়ে বিরোধের মধ্যেই উপজেলা শাখায় সদ্য পদ পাওয়া দুজনকে সম্প্রতি বহিষ্কার করা হয়। তাঁরা হলেন—যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম হোসেন খোন্দকার ও সদস্য দলিলুর রহমান। তবে দলিলুর রহমানকে কোনো ধরনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার পরও বহিষ্কারের অভিযোগ উঠেছে। দুজনই কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ৯৭। এর মধ্যে কাজী মফিজের অনুসারীরা স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকলেও পদ পেয়েছেন মাত্র ২১টি। পদ পাওয়া ৭৬ জনই জয়নুল আবদিন ফারুক ও আবদুল মান্নানের অনুসারী।
জানতে চাইলে কমিটি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কাজী মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতি করছেন। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও। বিগত ১৬ বছরে বিএনপিতে তাঁর অনুসারীরা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি নিজেও মামলার আসামি হয়েছেন মাঠে রাজনীতি করতে গিয়ে। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর অনুসারীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি জেলা কমিটির কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন।
কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে কর্মসূচি পালন করেছেন জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারীদের একাংশ।
যার কারণে তাঁর অনুসারী দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন—উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হান্নান ও পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক বাবুল।
কমিটির বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা, জেলার বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ–পদবি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।
পৌর বিএনপিতে আহ্বায়ক পদ পাওয়া মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। এখন আবদুল মান্নানের অনুসারী। কমিটি নিয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই, তিনি কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন পেয়েছেন। তাঁর বর্তমান লক্ষ্য হলো সব পক্ষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গড়ে তোলা।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, অনেক যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছি। কে কার অনুসারী—সেটা বিচার না করে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যোগ্য ব্যক্তিদের নামই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। এরপরও যাঁরা দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করবে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন স র দ র ব এনপ র ন ত র ব এনপ র প র ব এনপ কর ম দ র র জন ত ই কম ট কম ট ত কম ট র ক কম ট সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫