ওয়ালটন প্লাজার কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষানীতির আওতায় বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেয়েছে আরও একটি পরিবার। পরিবারটির বাকি কিস্তির টাকাও মওকুফ করেছে ওয়ালটন প্লাজা। পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ওয়ালটন প্লাজার আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করেছেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিলযোয়ানী গ্রামের মৃত ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রহিমা খাতুন ববিতা।

সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ওয়ালটন প্লাজার নাটোরের ক্রেতা মো.

জাহাঙ্গীর আলম। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ালটন প্লাজার পক্ষ থেকে এই সুবিধা পেল তার পরিবার। ওয়ালটন প্লাজা নাটোর থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রহিমা খাতুন ববিতা।

সোমবার (৭ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ালটন প্লাজা নাটোর রহিমা খাতুন ববিতার হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাটোর এরিয়ার রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার মো. তৌফিকুর রহমান সুমেল, রিজিওনাল ক্রেডিট ম্যানেজার মো. আমিনুর ইসলাম, ওয়ালটন প্লাজা নাটোরের ম্যানেজার শাহ আলম, অ্যাডিশনাল ম্যানেজার আহম্মোদ উল্লাহ, ডেপুটি ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম হোসেন, সিনিয়র অফিসার মোস্তফা কামাল, সেলস অফিসার দেবাশীষ কুমার মন্ডলসহ নাটোর এরিয়া ডিভিশন-১০ এর বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ওয়ালটনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

আরো পড়ুন:

অনলাইনে ওয়ালটন প্লাজায় পণ্য কেনায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়

পরিবেশবান্ধব টেকসই বিদ্যুৎ নিশ্চিতে ওয়ালটনের হাইব্রিড সোলার আইপিএস সলিউশন

নাটোর এরিয়ার রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার মো. তৌফিকুর রহমান সুমেল বলেন, “কিস্তিতে পণ্য কেনা গ্রাহকদের জন্য কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষানীতি সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন প্লাজা। এর আওতায় দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা থেকে কিস্তিতে পণ্য ক্রয়কারীদের কিস্তি সুরক্ষা কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কিস্তি চলমান থাকা অবস্থায় ক্রেতার মৃত্যু হলে পণ্যমূল্যের ভিত্তিতে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ এবং তার পরিবারের কোনো সদস্য মৃত্যুবরণ করলে ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ওয়ালটন প্লাজা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পণ্যের অনাদায়ী কিস্তির টাকা সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট টাকা ক্রেতা বা তার পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত নাটোর জোনে প্রায় শতাধিক ক্রেতার পরিবার এই সুবিধা পেয়েছেন।”

মৃত ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রহিমা খাতুন ববিতা জানান, নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিলযোয়ানী গ্রামের তাদের স্থায়ী বসবাস। তার অটোরিকশা চালক স্বামী ওয়ালটন প্লাজা নাটোর থেকে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৫ হাজার ৭৭৫টাকা ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ওয়ালটনের এনটেন আল্টা মডেলের একটি স্মার্ট ফোন কিনিছিলেন। মাত্র একটি কিস্তি পরিশোধ করেছিলেন তিনি। গত মার্চ মাসের ১৩ তারিখে হৃদরোগে তার স্বামী মারা যান। তার কিস্তির টাকা মওকুফসহ ৫০ হাজার টাকার সহায়তা দিয়েছে ওয়ালটন প্লাজা। 

পরিবারের এই অসহায় অবস্থায় ওয়ালটন প্লাজা তাকে সহায়তা করায় কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রহিমা খাতুন ববিতা। কিস্তির টাকা সমন্বয়ের পর ওয়ালটন প্লাজা থেকে নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে মোট ৩৪ হাজার ৩৬৯ টাকা গ্রহণ করেন তিনি। না চাইতেই ওয়ালটন প্লাজার কাছ থেকে এমন সহায়তা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মৃত জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার।

রহিমা খাতুন ববিতা বলেন, “কিস্তিতে পণ্য কেনার পর আমাদের একটি সুরক্ষা কার্ড দিয়েছিল ওয়ালটন প্লাজা। সে সময় ওই কার্ডটির গুরুত্ব বুঝিনি। তবে, আজ সেটির গুরুত্ব বুঝতে পারছি। কিস্তিতে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকের বিপদের দিনেও পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছে ওয়ালটন। এটি ওয়ালটন প্লাজার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আসলে এভাবেই দেশের এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ওয়ালটন প্লাজা থেকে এই আর্থিক সহায়তা পেয়ে আমরা সবাই অত্যন্ত আনন্দিত। পরিবারের এমন অবস্থায় এই টাকা আমাদের অনেক উপকারে আসবে।

ঢাকা/আরিফুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ র আলম র ৫০ হ জ র ট ক ত র পর ব র পর ব র র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া

শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে।

বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ, অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তাতে সবজির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সবজির সরবরাহ মোটামুটি থাকলেও দাম থাকে চড়া। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দামও কমতে শুরু করে। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে।

বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে এসব সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম শীতের সবজি বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার বেশ দেরিতেই এসব সবজি বাজারে এসেছে।

দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়াগত কারণে এবার আগাম সবজি একটু দেরিতে চাষ হয়েছে। এ জন্য খেত থেকে সবজি তুলতেও দেরি হয়।

এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের টানা বৃষ্টির একটি ভূমিকা ছিল। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।

এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতি

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে অন্যান্য সময় যেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, সেখানে এবার তা অক্টোবরের শেষে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম না কমার অন্যতম কারণ।

ভিন্ন দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়। এর মধ্যে গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমির এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, চলতি বছর শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিন দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। তবে সেটি সার্বিক চিত্র নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম, এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ কথা। আমাদের তথ্য বলছে, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন শীতের আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয় হয়ে এসেছে। আগাম সবজি যদি কম থাকত, তাহলে দাম আরও চড়া থাকার কথা ছিল।’

বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন,সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু জেলার নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল। এ ছাড়া বগুড়া, যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করেছে তারা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে আবার সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।

করণীয় কী

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ সত্যকে মেনে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজনের বিকল্প নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও ভালো দাম পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ