লাঠিপেটা না করে ছত্রভঙ্গ: রাষ্ট্রপতি পদক পেলেন সেই পুলিশ সদস্য
Published: 7th, April 2025 GMT
লাঠিপেটা না করে কৌশলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করা সেই পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে গত ২৭ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌছিফ আহমেদ এতে সই করেন। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন আকারে বিষয়টি প্রকাশ করে।
এর আগে রিয়াদ হোসেনের কৌশলী পুলিশিংয়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পূর্ব বিভাগে কর্মরত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিনব বুদ্ধিদীপ্ত পুলিশিং কৌশলের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্য রিয়াদ হোসেনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম-সেবা) দেওয়া হলো।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় লাঠিপেটার অঙ্গভঙ্গি করেন রিয়াদ হোসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা যায়, আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সড়কের ওপর আঘাত করছেন তিনি। কখনও ধাতব খুঁটিতে আঘাত করছেন। লাঠিপেটা করার ভঙ্গি করলেও তিনি কাউকে আঘাত করেননি। আবার আন্দোলনরতরাও সেখান থেকে সরে গেছেন। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই মন্তব্য করেন, পুলিশিং এমনই হওয়া উচিত। কেউ কেউ তাকে পুরস্কৃত করার প্রস্তাব দেন।
আইন উপদেষ্টা ড.
আন্দোলন দমাতে দেশে পুলিশের মারমুখী আচরণের যে নজির সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, তার বিপরীতে রিয়াদ হোসেন অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন। একপর্যায়ে তাই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশংসিত এই পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
এর আগে প্রতি বছরের পুলিশ সপ্তাহে পদক (পিপিএম ও বিপিএম) দেওয়া হত। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিচ্ছিন্নভাবে এ পদক দেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল