বাবর আলীর ভ্রমণকাহিনি: ১৭ দিন পায়ে হেঁটে শ্রীলঙ্কার এমাথা থেকে ওমাথা
Published: 7th, April 2025 GMT
আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়
সিংহল নামে রেখে গেছে নিজ শৌর্যের পরিচয়।
২০১৯ সালে হেঁটে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণের পর পদব্রজে লম্বা ভ্রমণে বেরোনো হয় না দীর্ঘদিন। লম্বা হাঁটার জন্য অনেক দিন ধরেই আমার বাকেট লিস্টে ছিল শ্রীলঙ্কা। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতায় পড়া ‘সিংহল’ নামটা সেই কত আগে থেকে মনে গাঁথা ছিল। তৎকালীন বঙ্গ কিংবা ওডিশার এক বিতাড়িত রাজপুত্র বিজয়সিংহ অকূল সমুদ্রে নাও ভাসাতে ভাসাতে সেরেনটিভু নামের এক রাজ্যে কূলের দেখা পান। ‘সেরেনটিভু’র বাংলা করলে দাঁড়ায়—‘পাহাড়িদের দ্বীপ’। ৭০০ অনুসারীকে নিয়ে নতুন এ রাজ্যের দখল নেন বিজয়সিংহ। ভূখণ্ডটির নতুন নাম রাখেন সিংহল। শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থ মহাবংস বলছে, বিজয়সিংহের বংশধরেরাই আজকের সিংহলি। অবশ্য শুধু সিংহলিই তো নয়, এই দ্বীপরাষ্ট্রে থাকে শ্রীলঙ্কান তামিল, মুর মুসলিম, বারগারস, ভারতীয় তামিলসহ নানা জাতিসত্তার মানুষ। ২৬ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ আর সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দার পর কেমন আছে সেই শ্রীলঙ্কা, স্বচক্ষে সেটা দেখার একটা ইচ্ছাও ছিল। আর বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক মার্কো পোলোই–বা কেন একে বিশ্বের সেরা দ্বীপ বলেছিলেন, সেটা জানার লোভও কম ছিল না।
কিন্তু সময়ের পুঁজি না মেলাতে বারবার পিছু হটতে হচ্ছিল। অবশেষে সেটা মিলতেই ১৭ দিনের হাঁটার পরিকল্পনা নিয়ে সেপ্টেম্বরের বর্ষণমুখর এক রাতে ফিটস এয়ারের ফ্লাইটে চড়ে বসলাম। সঙ্গী জুমন ভাই ও সাইফুল ভাই। লম্বা পদব্রজ ভ্রমণে সঙ্গী নিয়ে বেরোনোর একটা মুশকিল আছে। স্থানীয়দের সঙ্গে ভাববিনিময়ের সুযোগ কিছুটা হলেও কমে যায়। অন্য পিঠে স্বভাষী কারও সঙ্গ পাওয়াটাও অবশ্য কম লাভ না।
বাবর আলীর হন্টনযাত্রায় কয়েক দিনের সঙ্গী হয়েছিলেন জুমন নিয়াজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।