রেটিনাজনিত কারণে চোখে কম দেখার বিষয়টি রোগীর বুঝতে পারা বেশ কঠিন কাজ। রেটিনা বিশেষজ্ঞ ছাড়া রোগটি অন্য কেউ সরাসরি ধরতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস চশমা দ্বারা উন্নতি না হলে, আঘাতজনিত কারণে চোখে কম দেখলে, চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে, চোখের সামনে আলোর ঝলকানো দেখা দিলে, চোখে কালো পর্দার মতো কিছু পড়তে দেখলে এবং কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে কমে গেলে রেটিনাজনিত চোখের সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
রেটিনার রোগ বয়স ও কারণ ভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কোনো কোনো রোগ জন্মের কিছু দিনের মধ্যে চিকিৎসা না করালে সারা জীবন অন্ধত্ব বরণ করতে হয়। প্রিম্যাচিউরড শিশু যারা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ঠ হয় অথবা জন্মের সময় ওজন দেড় কেজি বা তার কম হয় সেসব শিশুর জন্মের ত্রিশ দিনের মধ্যে অবশ্যই রেটিনা পরীক্ষা করা জরুরি। নতুবা তারা রেট্রোলেন্টল পিসপ্লেশিয়া নামক গুরুতর রেটিনার রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে পারে। শিশুদের জন্য আরেকটি রোগ হলো রেটিনার টিউমার। সাধারণত তিন বছর অথবা তার নিচে শিশুরা চোখে কম দেখলে অথবা শিশুদের চোখের মণি সাদা দেখা গেলে তখন রোগটিকে সাধারণত জন্মগত ছানি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
আমাদের শারীরিক অনেক রোগ আছে যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, বার্ধক্যজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণেও রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস ত্রিশ বছরের আগে ধরা পড়ে এবং ইনসুলিন ছাড়া নিয়ন্ত্রণ হয় না, সাধারণত বিশ বছর পর তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই রেটিনার সমস্যা ধরা পড়ে। যাদের ডায়াবেটিস ত্রিশ বছর পর ধরা পড়ে তাদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ার সময়ে চোখের রেটিনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীর হঠাৎ করে দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে অথবা চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে দ্রুত রেটিনা বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত।
উচ্চ রক্তচাপে রক্তনালি বন্ধ হয়ে রেটিনার ক্ষতিসাধন হতে পারে। বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরে অন্য সব অঙ্গের মতো রেটিনাও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। চশমার দ্বারা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি না হলে ও চোখে আঁকাবাঁকা এবং অস্পষ্ট দেখা অথবা কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ক্রমাগতভাবে ধীরে ধীরে কমতে থাকলে রেটিনাতে সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। রেটিনা রোগীর সব ধরনের পরীক্ষা বর্তমানে বাংলাদেশে হয়ে থাকে। রেটিনা রোগীর সচেতনতাই তাকে অনাগত দিনে রেটিনাজনিত অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।