নববর্ষের শোভাযাত্রায় থাকছে ২৭ নৃগোষ্ঠীও
Published: 10th, April 2025 GMT
সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত হবে এবারের চৈত্রসংক্রান্তি এবং বর্ষবরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় নববর্ষের শোভাযাত্রায় বাঙালিসহ অংশ নেবে ২৭ নৃগোষ্ঠীও। এ ছাড়া দুই শতাধিক তরুণ মিউজিশিয়ান গিটার ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে হাজির হবেন এই শোভাযাত্রায়।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বড় পরিসরে চৈত্র বিদায় ও বাংলা নতুন বছরকে বরণ করার উৎসবের আয়োজন করেছে সরকার। এবারের নববর্ষের আয়োজনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি হতে যাচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক। তার জন্য প্রস্তুত পাহাড় থেকে সমতল– পুরো দেশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি। এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, এবার পার্বত্য এলাকার সাংস্কৃতিক উৎসব নতুন মাত্রায় উদযাপন করা হবে।
রাজধানী ও সারাদেশের চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষে কী কী আয়োজন রয়েছে তা সংক্ষেপে তুলে ধরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের উৎসবটা এবার চৈত্রসংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ঢাকা শহরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে কনসার্ট হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর পহেলা বৈশাখে সুরের ধারার প্রভাতি আয়োজনটি হবে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে। ছায়ানট রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে ভোর সোয়া ৬ টায়। এ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠীকে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে সম্পৃক্ত করে পাহাড়ের বৈশাখী আয়োজনে বিস্তৃত করা হচ্ছে। আগামী ১৩ এপ্রিল দেশের ১২টি জেলার আধ্যাত্মিক ধারার সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সন্ধ্যায় নবপ্রাণ আন্দোলন রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বাংলার উৎসব’ শিরোনামে বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
পহেলা বৈশাখের দিন বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বৈশাখী ব্যান্ডশোর আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ড্রোন শোতে ফুটিয়ে তোলা হবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এতে সহযোগিতা করছে চীন দূতাবাস।
পহেলা বৈশাখের সকাল থেকে বাংলা একাডেমিতে বিসিক আয়োজন করছে বৈশাখী মেলা। একই দিনে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে শুরু হবে ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা।
আগের দিন থেকে ৩০টি জেলায় শুরু হবে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী লোকনাট্য উৎসব। ১৫ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১২টি জেলায় শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত হবে অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী।
এর আগে দুপুর ১২টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ান্সের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু ও বিভিন্ন ব্যান্ড দলের সদস্য।
এতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, এ বছর পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীসহ দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ান অংশগ্রহণ করবেন। ব্যান্ড মিউজিশিয়ানরা পৃথিবীর শান্তি কামনায়, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য সম্মিলিতভাবে একটি গান গাইবেন।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হবে ‘ব্যান্ড শো’। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দলগুলো।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ত রস ক র ন ত এক ড ম ত শ ল পকল উপদ ষ ট নববর ষ অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়