পিতার মস্তিষ্কে ঘর আমি তবু আলাদা কেউ
আছে সে নিশ্চিত জানি; দেখে না চোখ
না রূপ, না অরূপ
দল বেঁধে থাকি অসংখ্য ভাই-বোন
মা তার বুক পেতে ধরে রাখে
খণ্ড খণ্ড আমাকে, তাকে এবং তোকে
অন্ধকার ঘন হলে স্মৃতিরা ডানা মেলে—
চুপচাপ, খুব ধীরে
জেগে ওঠে হরেক জগৎ
রাজকন্যার রূপ নিয়ে বসে থাকে মা
কত স্বপ্ন, কত গল্পেরা মুহূর্তে মহিরুহ হয়
মা মেলে ধরে অপরূপ রূপ, বেহেশতের খুশবু
বাবা কামে
ঘামে
মায়ের পুকুর থেকে তুলে আনে চিতল হরিণ
আমাদের ঘুম ভাঙে
অসংখ্য কোটি বছরের ঘুম থেকে
আমরা অসংখ্য ভাই-বোন জেগে উঠি
এ আমাদের গেরিলা যুদ্ধ ছিল
পৃথিবীকে জানবার, মাটিতে সোনারোদ গন্ধ মেখে
কিছু প্রেম মানুষকে বিলাব, অথবা আমরা গোল হয়ে ঘুরি
মায়ের নাভিমূলে
মা বিস্তৃত হতে থাকে, মা প্রসারিত হতে থাকে
মা হেমন্তের নরম ভোর, অলৌকিক রোদ.
প্রতি রাতে বাবাকে হত্যা করে মা
ক্রমাগত বাবা জন্মাতে থাকে মায়ের পুষ্পিত জলাধার থেকে
আমরা বুঝতে পারি না, কে মা? কে বাবা?
মানুষ মূলত ভ্রমণে আছি
শুধু কি আমরা এই নদী–নক্ষত্র–আকাশ
ফেনিল আকাশগঙ্গা অজস্র মহাকাশ
অসংখ্য ধূলিকণা, গতির নিভৃত প্রাণ
পথে পথে যুদ্ধ হলো
ভীষণ
খানাখন্দ বাধা, ভাইয়ের চিৎকার
বোনের যন্ত্রণাকাতর মুখ, তবু
আমাকেই যেতে হয়েছে, পেছনে
কোটি কোটি ভাইবোনের মৃত্যুর মিছিল
যে যাচ্ছে, তার কোনো অপরাধ নাই
যে আসছে, তার কোনো অপরাধ নাই
কথা ছিল হাসিতে ফেটে পড়ি
এসেছি নতুন দেশে; দৃশ্যমান পেয়েছি শরীর
কেন তবে দিয়েছি হরেক চিৎকার?
কার ভয়ে?
অতীত হত্যার ছোপ ছোপ রক্ত, চিৎকার
কান্না-অভিমান
ভাইকে হত্যার অপরাধ?
বোনকে হত্যার অভিশাপ?
কিসের কান্না আমার?
স্মৃতি আমাকে কান্নার ভাষা দেয়
কান্না দেয় মুক্তি অথবা—
মানুষের কি কখনো মুক্তি হয়েছিল?
এত ধর্ম এল
দেবতা, মুনি, নবী এল বিশ্বমুক্তির বার্তা নিয়ে
তবু পৃথিবীতে শান্তি এল না
জন্মের মৃত্যু থাকে চলমান
হত্যা থাকে চলমান
আমরা মানুষেই ফিরে এসেছি বারবার
মানুষ হত্যা করে যে মানুষ টাকা নেয়
সে অর্থ সে ভালোবেসে মানুষে দেয়
এ বিশাল পৃথিবী
দখল নিয়েছে মানুষ
প্রতি ইঞ্চি জমি-পাথর-ঝরনা-বন
মানুষের পদচ্ছাপ সবর্ভূতে ব্যাপ্তিমান
দখল মানে যুদ্ধ
যুদ্ধ মানে মৃত্যু—হত্যা-লুট-মৃত্যু
এত বিপ্লব, রক্তপাত, যুদ্ধ, হানাহানি
তবু দিন শেষে ফিরে এসেছি মানুষের কাছে
মানুষের বোধ দিয়েছে নতুন পথ
গতি আর স্থিতি
হত্যা আমাদের করতে হয়
হত্যা–শান্তি
ধর্ম–হত্যা, সভ্যতা–হত্যা
পৃথিবীতে প্রতিদিন হত্যার উৎসব বসে
হাওয়াকে হত্যা করে তির ছুটে চলে সামনে
কারও কোনো অপরাধ থাকে না
কত কত মা তার সন্তানকে সমূহ হত্যা করে
নিভৃতে কান্নার উৎসব করে
কারও কোনো অপরাধ নাই
মানুষ ভালোবাসবে শুধু
সকল প্রাণীকে, পাহাড়, নদী, ঘাস
হাওয়াকে হত্যা করে তির ছুটে চলে সামনে
কারও কোনো অপরাধ থাকে না
না হাওয়ার, না তিরের...
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস