ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস গনহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বন্দরে বিভিন্ন এলাকায় দোয়া ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বাদ জুম্মা বন্দর উপজেলার ঘারমোড়া ঈদগাহ ময়দানে ঘারমোড়া ও চর ঘারমোড়া এলাকাবাসী আয়োজনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, ইসরায়েল ইসলামের শত্রু  তারা মুসলমানদের শত্রু। ইহুদিরা ফিলিস্তিনে গাজায় যে নৃশংস গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে আমরা গনহত্যার র্তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এর পাশাপাশি আমাদের দেশের ব্যবসায়ী ভাইদেন ও এলাকাবাসীকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য তাদের সকল পন্য আমাদেরকে বয়কট করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করার জন্য বিশ্বের সকল মুসলমানরা এক জোট হয়ে ইসরায়েল আগ্রাসনকে রুখে দিতে হবে।

ঘারমোড়া  বাইতুল আমান জামে মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক  রমিজ উদ্দিন বুলেটের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ঘারমোড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি সোয়াইব আহাম্মেদ সাকি, ঘারমোড়া নতুন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব  মুফতি আবুল কাশেম, ঘারমোড়া বাইতুল আমান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা আবু সাঈদ, ঘারমোড়া পাক্কা জুম্মা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল গাফফার, চর ঘারমোড়া উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি এম.

এস কাউছার, চর ঘারমোড়া  জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি এহতেশাম বিন আনোয়ার প্রমুখ।

দোয়া পরিচালনা করেন দক্ষিন ঘারমোড়া সালামত উল্ল্যাহ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম। দোয়া ও প্রতিবাদ সভায় ঘারমোড়া, চর ঘারমোড়া ও আলীনগরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১ হাজার মুসল্লী ও সাধারন জনগন অংশ গ্রহন করেন। 
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

শিকারি ইসরায়েলকেই ভুক্তভোগী দেখাচ্ছে পশ্চিমারা

ইসরায়েল শুক্রবার সকালে কোনো উস্কানি ছাড়াই ইরানের অভ্যন্তরে ইস্পাহান ও তেহরানকে নিশানা করে বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় বিজ্ঞানী, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, নারী-পুরুষসহ অনেক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারায়। অথচ পশ্চিমা নেতৃত্ব ও মিডিয়া ইসরায়েলের আগ্রাসনকে ‘প্রিএম্পটিভ’ তথা সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে আগাম হামলা হিসেবে দেখাচ্ছে। মার্কিন সিনেটের নেতা জন থুন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইরানি আগ্রাসন’ বন্ধ ও আমেরিকার সুরক্ষার জন্যই ইসরায়েল হামলা করেছে।   

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের পরও পশ্চিমা বিশ্ব শিকারি ইসরায়েলকে তারই শিকারদের দ্বারা আক্রান্ত এক ‘ভিকটিম’ বা ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল যখন বসতি স্থাপনকারী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠন করেছে, তখন থেকেই পশ্চিমাদের এ প্রবণতা স্পষ্ট। ইসরায়েল যতই ভূমি দখল করছে ও মানুষকে নিপীড়ন করছে, ততই পশ্চিমারা তাকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখাচ্ছে। এই উপস্থাপনা আকস্মিক বা কোনো দুর্ঘটনা নয়।   

১৯৬৭ সালের জুন মাসের যুদ্ধে পশ্চিমারা ইসরায়েলকে ভুক্তভোগী হিসেবে দেখায়। তাকে ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়। এর ফলে পশ্চিমা খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দাঁড়ায় বহু গুণ, যারা আরব ও ফিলিস্তিনিদের অত্যাচারী হিসেবে দেখে। ইসরায়েলের ভূমি দখলের বিষয়টি আত্মরক্ষার সাহসী ভূমিকা হিসেবে উদযাপন করা হয়। এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিমা বিশ্ব ‘ভুক্তভোগী’ ও ‘আগ্রাসী’র যে চরিত্র অঙ্কন করেছিল, তা এখনও চলমান। 
১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০০ ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে সেখানে ইহুদি উপনিবেশ বানায়। এই দখলকে পশ্চিমা বিশ্ব অলৌকিক ঘটনা হিসেবে স্বাগত জানায়। ফিলিস্তিনিদের হারানো ভূমিতে জায়নবাদীরা যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, পশ্চিমারা কখনোই তার সমালোচনা করেনি। উল্টা ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখলের জন্য ইসরায়েলকে মহিমান্বিত করার পাশাপাশি পশ্চিমারা তাদের ছোট্ট রাষ্ট্রের জন্য বিলাপ করেছে। তারা ইসরায়েলের উপনিবেশবাদী সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়েছে এবং ভালোভাবেই এ দখলকর্ম চলছিল। ভাবটা এমন যে, ভুক্তভোগী হিসেবে ইসরায়েলের আরও ভূমি দখল করা প্রয়োজন।   

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েলের পশ্চিম তীর সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে সমর্থন করে দাবি করেছেন, ‘এটি (ইসরায়েল) ছোট্ট একটি দেশ… ভূমির পরিমাণের দিক থেকে এটি ছোট দেশ।’

২৯ জুন ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমকে পশ্চিম জেরুজালেমের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে গ্রহণ করে পরে ফিলিস্তিনি-জর্ডানি মেয়রকে বরখাস্ত করে। এভাবে পৌর পরিষদ ভেঙে পুরো শহরকে ইহুদীকরণ করে। দখলের পরপরই শহরটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে সব রকম নির্মাণকাজ নিষিদ্ধ করে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন ইহুদি উপাসনালয় আবিষ্কার করতে সেখানে প্রত্নস্থল খনন এবং এ কাজ করতে গিয়ে ফিলিস্তিনি অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে, যার মধ্যে ছিল চতুর্দশ শতাব্দীর ফখরিয়া হাসপাতাল ও আল তানজিকিয়া স্কুল। ১৯৮০ সালে ইসরায়েল অফিসিয়ালি শহরটিকে দখল করে নেয়, যদিও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনে একে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 
মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনাগুলোর নিচে ও আশপাশে তারা খননকার্য চালাতে থাকে এ আশায়– সেখানে ইহুদিদের প্রথম উপাসনালয় পাওয়া যাবে, যা আসলে পাওয়া যায়নি। এর পর শুরু হয় জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি উচ্ছেদ কার্যক্রম। দখলকৃত এলাকায় তারা সময়ে সময়ে কারফিউ জারি করে এবং গণহারে মানুষকে শাস্তি দেয়। ইসরায়েলিরা এমনকি পশ্চিম তীরের নাম বদলে বাইবেলের কল্পিত নাম অনুসারে ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ রাখে, এভাবে শহর ও সড়কের নাম পাল্টে দেয়।

এ পথ ধরেই চলমান জেনোসাইড ঘটানো হচ্ছে ফিলিস্তিনে। ইসরায়েলের পশ্চিমা সমর্থক ও তহবিলদাতারা এগুলোকে হয় প্রশংসা করেছে, না হয় এদের ব্যাপারে উদাসীন থেকেছে। 
এভাবে ইসরায়েল যতই তার শিকারদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে ততই যেন পশ্চিমা সমর্থন তার প্রতি বাড়ছে। আশ্চর্যের কিছু নেই– ইসরায়েলের সর্বশেষ ইরান হামলার পরই শুধু নয়; গাজায় গণহত্যামূলক অভিযান, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর সময়েও তার পশ্চিমা মিত্ররা সমর্থনের এই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দৃষ্টিতে ইসরায়েল শুধু আত্মরক্ষাই করছে না, বরং পশ্চিমাদের প্রক্সি হিসেবেও কাজ করছে। ইসরায়েলের এই চলমান ধ্বংসযজ্ঞ আবারও স্পষ্টভাবে দেখায়– পশ্চিমারা কীভাবে ‘শিকার’ হিসেবে ভান করে; অ-পশ্চিমা শিকারদের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালায় এবং তার পক্ষে সম্মতি আদায় করে।

জোসেফ মাসাদ: অধ্যাপক, মডার্ন আরব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টেলেকচুয়াল হিস্টোরি, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; মিডল ইস্ট আই থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ