বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণেই সরে এলেন ট্রাম্প
Published: 12th, April 2025 GMT
এক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তাঁর চাপিয়ে দেওয়া শুল্কনীতি বিশ্ববাজারে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও তিনি ছিলেন নির্বিকার। শেয়ারবাজার রক্তাক্ত হলেও বলেছেন, সমস্যা হলে ওষুধ দিতে হয়। সেই ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ওষুধ কাজ শুরু করেছে।
শুল্ক নিয়ে সমঝোতা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টরা ফোন করেছেন। সেটিও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তিনি। বলা বাহুল্য, তিনি সেটাই চাচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে বাজারের অমোঘ বাস্তবতার কারণেও তিনি আপাতত ৯০ দিনের জন্য শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করলেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। এ ঘোষণার পর অবশ্য বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে।
বিশেষ করে সরকারি বন্ডের সুদের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক ব্যবস্থায় অস্থিরতা শুরু হয়। অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত বন্ডের সুদহার বেড়ে যায়। মার্কিন বন্ডের সুদহার গতকাল ৪ দশমিক ৫ শতাংশে উঠে যায়। সেই সঙ্গে বিক্রির চাপ ফেড ও নীতিপ্রণেতাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। যদিও সাধারণত শেয়ারবাজার ধসের সময় মানুষ বন্ড কেনে। এবার তার উল্টো দেখা যায়। এমনকি অর্ধশত বিলিয়ন ডলারের বন্ডের নিলামের নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়। সেটা হলে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। সম্ভবত এই চাপেই ট্রাম্প শেষমেশ নতি স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে তারঁ যা লক্ষ্য ছিল, সেটা তো হাসিল হয়েছে—৭৫টির বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ।
মূলত এই দুটি কারণে ট্রাম্প বেশির ভাগ দেশের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য ‘পারস্পরিক শুল্ক’ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ভাবলাম, মানুষ একটু বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। সবাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল, একটু বেশি অস্থির হয়ে উঠেছিল, তাই এ সিদ্ধান্ত।’
ট্রাম্প তিন মাসের জন্য অতিরিক্ত বা পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় যেটা ঘটল, তা হলো বিশ্ববাজারে একধরনের স্বস্তি এল। এশিয়ার শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের জায়গা থেকে সরে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে শুরু করে বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ঘটনায় একধরনের স্বস্তি এসেছে। অর্থাৎ সবাই আপাতত নির্ভার হয়েছে। কিন্তু এখনই উদ্যাপন করার কিছু নেই।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যে পৃথকভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই শুল্ক স্থগিত হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখনো ন্যূনতম শুল্ক রয়ে গেছে। তার সঙ্গে আছে আগের শুল্ক। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের পণ্যে শুল্ক এখনো রয়ে গেছে। ফলে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না।
এশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন। এই দেশগুলো চীনের রপ্তানিমুখী শিল্পের সংযোগ শিল্প হিসেবে কাজ করে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে গেলে এসব দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে চীন বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক। চীনের অর্থনীতিতে গতি না এলে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমতে পারে। তাতে অবশ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য সুবিধা।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পেডেন অ্যান্ড রাইগেলের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফরি ক্লিভল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমরা যে চরম পরিণতির দিকে যেতে পারতাম, সেখান থেকে ফেরা গেছে ঠিক। তবে বাস্তবতা হলো, বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এই অনিশ্চয়তার কারণে আগামী তিন মাস বিশ্ব অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে যাবে।
শুল্ক স্থগিতের কারণে মন্দা এড়ানো যাবে, জে পি মর্গ্যানও সে কথা বলেছে। ক্লিভল্যান্ড বলেন, এ পরিস্থিতিতে মন্দা এড়ানো গেলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে। তবে স্বল্প মেয়াদে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। এ পরিস্থিতিতে বন্ড বাজার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া হঠাৎ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বেশি লভ্যাংশ চাইতে পারেন।
সারা দিন নানা ঘটনায় বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নির্বিকারভাবে ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, দারুণ একটা দিন গেল। এ রকম আরও দারুণ দিন আসছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ড র স দ পর স থ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।
সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।
১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।
সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।
ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।
ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।
মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধানওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।
গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।
ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪