ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে ১০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ। একই সঙ্গে প্রশাসকেরও পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সহায়ক কমিটি বাতিল ও প্রশাসক পদত্যাগ না করলে মানববন্ধন ও আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার কথাও জানায় পরিষদ।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ।

এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন, পরিষদের সদস্যসচিব এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো.

জালালউদ্দীন, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও সহ-সভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং এফবিসিসিআিইয়ের সাবেক সাবেক পরিচালক ও সহ-সভাপতি নিজামউদ্দীন রাজেশ, যুগ্ম আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবু মোতালেব, যুগ্ম আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক খন্দকার রহুল আমিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক হাফেজ হারুন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী ১১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাকে ১২০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নির্বাচিত পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। হাফিজুর রহমান প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে তার পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন। যে কমিটিতে একই অ্যাসোশিয়েসন থেকে দুইজন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যা বিধি সম্মত হয়নি। এই কমিটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ না করে এখন নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। একই সঙ্গে সংস্কারের নামে নির্বাচন কালক্ষেপণ করছে।

এ সময় অভিযোগ করে বলা হয়, আগামী জুন মাসে নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকের উচিত ছিল এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, সহ-সভাপতি, পরিচালক ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজেট কমিটি গঠন করা। অথচ তিনি তা করেননি। আমরা বলবো তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই থেকে প্রতিনিধি হিসেবে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে- এদের অনেকেই এফবিসিসিআইয়ের সদস্য নন। আরও দুঃখজনক বিষয় যে, এদের অনেকেরই কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এফবিসিসিআইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। অথচ সহায়ক কমিটির কাছের কিছু সদস্য ও কিছু পরিচিত মুখ বারবার গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। বিষয়টি প্রশাসকের নজরে আনা এবং তাকে বারবার বলার পরও এসব লোকদের এফবিসিসিআইতে পদচারণা বন্ধ হয়নি। তাই আমাদের দাবি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে সহায়ক কমিটি বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসককেও পদত্যাগ করতে হবে। যদি সেটি না করা হয়- তবে এফবিসিসিআই রক্ষায় বৃহত্তর আকারে মানববন্ধন ও আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবে এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ।

এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলেনে চার দফা দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো-

১. এফবিসিসিআই নির্বাচিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে প্রশাসক হিসেবে চাই।
২. নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে এফবিসিসিআইকে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে হবে।
৩. অবিলম্বে সহায়ক কমিটি বাতিল করে প্রকৃত নিরপেক্ষ, সৎ ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। যাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এই কমিটির কোনো সদস্য এফবিসিসিআই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবের না।
৪. চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সব পদে স্ব স্ব গ্রুপের সরাসরি ভোট দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে হবে।

চার দফা দাবির পক্ষে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব দাবি না মানা হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। সরকার নিযুক্ত প্রশাসক দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিলেও ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফেডারেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে ফেডারেশনের সংস্কার কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে। সে কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে না।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় দ র র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ