এফবিসিসিআই সহায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আলটিমেটাম
Published: 12th, April 2025 GMT
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সহায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে ১০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ। একই সঙ্গে প্রশাসকেরও পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সহায়ক কমিটি বাতিল ও প্রশাসক পদত্যাগ না করলে মানববন্ধন ও আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার কথাও জানায় পরিষদ।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ।
এতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন, পরিষদের সদস্যসচিব এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মো.
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী ১১ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাকে ১২০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে নির্বাচিত পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। হাফিজুর রহমান প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে তার পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি সহায়ক কমিটি গঠন করেন। যে কমিটিতে একই অ্যাসোশিয়েসন থেকে দুইজন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যা বিধি সম্মত হয়নি। এই কমিটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ না করে এখন নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। একই সঙ্গে সংস্কারের নামে নির্বাচন কালক্ষেপণ করছে।
এ সময় অভিযোগ করে বলা হয়, আগামী জুন মাসে নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসকের উচিত ছিল এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, সহ-সভাপতি, পরিচালক ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজেট কমিটি গঠন করা। অথচ তিনি তা করেননি। আমরা বলবো তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই থেকে প্রতিনিধি হিসেবে যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে- এদের অনেকেই এফবিসিসিআইয়ের সদস্য নন। আরও দুঃখজনক বিষয় যে, এদের অনেকেরই কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এফবিসিসিআইয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে জাতীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। অথচ সহায়ক কমিটির কাছের কিছু সদস্য ও কিছু পরিচিত মুখ বারবার গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। বিষয়টি প্রশাসকের নজরে আনা এবং তাকে বারবার বলার পরও এসব লোকদের এফবিসিসিআইতে পদচারণা বন্ধ হয়নি। তাই আমাদের দাবি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে সহায়ক কমিটি বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসককেও পদত্যাগ করতে হবে। যদি সেটি না করা হয়- তবে এফবিসিসিআই রক্ষায় বৃহত্তর আকারে মানববন্ধন ও আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবে এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ।
এফবিসিসিআই স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলেনে চার দফা দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো-
১. এফবিসিসিআই নির্বাচিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিকে প্রশাসক হিসেবে চাই।
২. নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে এফবিসিসিআইকে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে হবে।
৩. অবিলম্বে সহায়ক কমিটি বাতিল করে প্রকৃত নিরপেক্ষ, সৎ ব্যবসায়ী প্রতিনিধির সমন্বয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। যাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এই কমিটির কোনো সদস্য এফবিসিসিআই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবের না।
৪. চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের সব পদে স্ব স্ব গ্রুপের সরাসরি ভোট দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হতে হবে।
চার দফা দাবির পক্ষে ব্যবসায়ীরা বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব দাবি না মানা হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। সরকার নিযুক্ত প্রশাসক দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিলেও ব্যবসায়ীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফেডারেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। অন্যদিকে ফেডারেশনের সংস্কার কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে। সে কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে না।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় দ র র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে