যে গ্রহকে খেয়ে ফেলছে তার নক্ষত্র
Published: 13th, April 2025 GMT
মিল্কিওয়ে ছায়াপথে পৃথিবী থেকে প্রায় ১২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অ্যাকুইলা নক্ষত্রমণ্ডল অবস্থিত। সেখানকার দারুণ এক ঘটনার খোঁজ মিলেছে। ২০২০ সালের মে মাসে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন। সেই গ্রহকে তার নক্ষত্র খেয়ে ফেলছে। নক্ষত্রটি আসলে তার জীবদ্দশার শেষ দিকে ফুলেফেঁপে লাল দানবে পরিণত হওয়ার সময় গ্রহটিকে গ্রাস করতে শুরু করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের নতুন পর্যবেক্ষণ সেই ঘটনার ময়নাতদন্ত করছে। দেখা যাচ্ছে, গ্রহটির পতন প্রাথমিকভাবে যা ভাবা হয়েছিল, তার থেকে ভিন্নভাবে ঘটেছে। গবেষকেরা বলেছেন, নক্ষত্র গ্রহের কাছে আসার পরিবর্তে গ্রহটি নক্ষত্রের কাছে ধেয়ে আসতে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা গ্রহকে কক্ষপথ থেকে গ্রাস করতে থাকে।
নক্ষত্রের চারপাশে একটি বলয় তৈরি করা উত্তপ্ত গ্যাসের মাধ্যমে গ্রহটিকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলতে দেখা যায়। বিজ্ঞানী রায়ান লাউ বলেন, গ্রহকে যখন গ্রাস করে ফেলে, তখন নক্ষত্রের থেকে প্রচুর পরিমাণে উপাদান নির্গত হয়। ধূলিময় অবশিষ্ট অনেক উপাদান নক্ষত্র থেকে বের হয়ে আসে। নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে সামান্য লালচে ও কম উজ্জ্বল। ভর সূর্যের প্রায় ৭০ শতাংশ। আর যে গ্রহকে গ্রাস করেছে, তা হট জুপিটার শ্রেণির বিশাল গ্রহ। নক্ষত্রের খুব কাছে বলে এমন গ্রহ উচ্চ তাপমাত্রার গ্যাসীয় গ্রহ।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী মর্গান ম্যাকলিওড বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করছি সম্ভবত একটি বিশাল গ্রহের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতি গ্রহের ভর কয়েক গুণ গ্রহটিকে নক্ষত্র গ্রাস করে নিয়েছে।’
বৃহস্পতি আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। গবেষকেরা বিশ্বাস করেন, গ্রহটির কক্ষপথ তার নক্ষত্রের সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার কারণে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যায়। পরে সেই গ্রহকে গ্রাস করে নেয় নক্ষত্র। প্রথম নক্ষত্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে ধ্বংস করে দেয়। নাক্ষত্রিক বায়ুমণ্ডলের মধ্য প্রবেশের মধ্য দিয়ে গ্রহটি দ্রুত নক্ষত্রের মধ্যে পতিত হয়। গ্রহটি ভেতরের দিকে পতিত হয় ও নক্ষত্রের গভীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার গ্যাসীয় বাইরের স্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এমন ঘটনা আমাদের সৌরজগতে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। যদিও আমাদের সৌরজগতের কোনো গ্রহ সূর্যের এত কাছে অবস্থিত নয়। আজ থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছর পর সূর্য লাল দানব পর্যায়ে বাইরের দিকে প্রসারিত হবে। তখন সম্ভবত বুধ ও শুক্রকে গ্রাস করবে। সেই হিসেবে পৃথিবীকেও গ্রাস করতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র স র গ র স কর গ রহট গ রহক
এছাড়াও পড়ুন:
কালিদাসের হাত ধরে যে জামুর্কীর সন্দেশের যাত্রা, তার জিআই স্বীকৃতিতে খুশি সবাই
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী গ্রামের প্রয়াত কালিদাস চন্দ্র সাহা। এ জন্য তাঁর বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রয়াত মদনমোহন সাহা তাঁকে সংসার থেকে আলাদা করে দেন। এরপর মিষ্টির দোকানের আশপাশে বসে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সন্দেশ বানাতে শুরু করেন। সেটা ১৯৪০ সালের কথা।
একসময় কালিদাসের বানানো এই সন্দেশ জামুর্কীর সন্দেশ হিসেবে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সন্দেশ এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের হাতে জামুর্কীর সন্দেশের জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জামুর্কীতে গিয়ে দেখা গেল, ‘কালিদাস মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের চৌচালা টিনের ঘর। পুরোনো দোকান। বাড়তি কোনো চাকচিক্য নেই। সাদামাটা কাচঘেরা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা বাড়ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কালিদাস ১৯৮২ সালে মারা যান। তারপর তাঁর বড় ছেলে সমর চন্দ্র সাহা ব্যবসার হাল ধরেন। আরেক ছেলে গৌতম সাহা লন্ডনপ্রবাসী।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদরের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিরতি দিয়ে সন্দেশ কিনতে ওই দোকানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আগেও এই দোকানের সন্দেশ খেয়েছি। আজও নিচ্ছি। এর গুণগত মান সব সময় ভালো।’
জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে স্থানীয় লোকজনও খুশি। জামুর্কী গ্রামের ফিরোজ আলম মোক্তার বলেন, এই সন্দেশের স্বীকৃতি আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। এই সন্দেশের মান যাতে বজায় থাকে, এ জন্য মালিকদের ইচ্ছা থাকতে হবে।
বর্তমান মালিক সমর চন্দ্র সাহাকে পাওয়া গেল জামুর্কী কাঁচাবাজারে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। বাজারের মাতৃভান্ডারের মালিক প্রকাশ বাকালী বলেন, ‘বাবার মুখে যেমন শুনেছি, সন্দেশ এখনো তেমনই আছে। এটা আমাদের গর্ব। আমার বুক ভরে গেছে।’
সমর চন্দ্র সাহা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর ছাত্রাবস্থায় তিনি দোকানে বসতে শুরু করেন। সেই থেকে এখনো আছেন। সন্দেশ খেয়ে মানুষ প্রশংসা করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামুর্কী বাসস্ট্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে এসে দোকানটিতে এসেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক মাস আগেও এসেছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন করে। তাঁর কথা, ‘ট্যাকাপয়সা কিছু না। এই স্বীকৃতি বিশাল ব্যাপার। আমরা মান ভালো করি। কাস্টমাররা আমাদের পছন্দ করেন। সন্দেশ কিনতে এসে দোকানে বসে গল্প করেন। আমার খুবই ভালো লাগে। খুশির এই সময় আমার বাবা-দাদাকে খুব মনে পড়ছে। আমি তাঁদের স্মরণ করি।’
দোকান দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রেমা সাহা বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে দোকানে আছি। কাস্টমারকে আমরা আপন মনে কইরা সেবাটা দেই। আমরা জিনিস ভালা বানাই। এ জন্য সরকারও স্বীকৃতি দিছে।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্দেশের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ স্বীকৃতি মির্জাপুরবাসীর।
দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সন্দেশ বিক্রি হয়। চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের সন্দেশের বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। দুধ থেকে ছানা তৈরির পর এলাচি, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে সন্দেশ বানানো হয়। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় চুলা থেকে একটি করে বড় কড়াই নামানো হয়। একটি কড়াই থেকে প্রায় ৩০ কেজি সন্দেশ বানানো যায়। দোকানটিতে সন্দেশ ছাড়াও চমচম, রসগোল্লা, রসমালাই, দই ও ঘি বিক্রি করা হয়।