সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে চরম সংকটে পড়েছেন দেশের রিকশাচালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত নাগরিকরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ‍মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর অন্যতম কারণ।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন এক বেলা খাবার বাদ দিচ্ছেন, বোতলজাত পানি কিনতে পারছেন না, রুটি-বিস্কুটেই পেট চালিয়ে নিচ্ছেন। অথচ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর রয়েছে ৭.

৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। এই করনীতি গরিবের জীবনে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে তরুণদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণা সংস্থা ‘ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক’।

দেশের ১,০২২ জন নাগরিকের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ উত্তরদাতা কোনো না কোনো সময় খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন কেবল অর্থাভাবে। তাদের মধ্যে অধিকাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে, এবং এর নিচেও আয়ের সংখ্যা কম নয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা বাদ দেন। দুপুর বা বিকেলের খাবারও বাদ দিতে হয় অনেক সময়। কারণ খাবার কেনার সামর্থ্য অনেক সময় তাদের থাকে না।
ভাতের বিকল্প সস্তা ও পেট ভরানো খাবারের মধ্যে বিস্কুট, কলা, পরোটা, ডিম এগিয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিস্কুট। ৫২৩ জন উত্তরদাতা এটিকে তাদের প্রিয় ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিস্কুটের ওপরও রয়েছে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাট কার্যত গরিবের খাবার থেকে কর আদায় করার শামিল। খাদ্যপণ্য হিসেবে যেসব আইটেম গরিব মানুষের নিত্যদিনের রসদ, তাদের ওপর ভ্যাট বসিয়ে বাজেট ভারসাম্য আনা সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থি। 

জরিপে ৯০৪ জন বলেছেন, তারা বোতলজাত পানি কিনতেই পারেন না। বোতলজাত পানিকে তারা বিলাসদ্রব্য বিবেচনা করেন।

জরিপ বলছে, ৮৯৭ জন মনে করেন আগের বাজেট তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। ৭০১ জন সরাসরি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিবেচনায় এখানে ভ্যাটের হার অনেক বেশি। এই শ্রেণির মানুষের জন্য একটি টাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর নীতিতে সামান্যতম পরিবর্তনই দরিদ্র এই শ্রেণির জন্য একবেলার খাবার পাওয়া না পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

তবে হতাশার মাঝেও এবার নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী হয়েছেন অনেকে। জরিপে ৭১২ জন অংশগ্রহণকারী বলেছেন—তারা আশা করছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এবারের বাজেটে তাদের কথা শুনবে। তাদের দাবি, ‘সহানুভূতির দরকার নেই, দরকার ন্যায্যতার।’

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০৫ জন বলেছেন—নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কর কমানো উচিত। ১৯৫ জন বলছেন, ভর্তুকি ও সহায়তা বাড়ানো দরকার। ১৯৩ জন চান—ধনীদের ওপর কর বাড়ানো হোক।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, পণ্যের দাম কমানো, জনবান্ধব বাজেট, ভ্যাট হ্রাস এবং বাজারদর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই যেন বাজেটের মূল লক্ষ্য হয়। তবে অনেকেই কোনো প্রত্যাশা করেননি সংশয় বা নিরাশার কারণে।

চলতি অর্থবছরের মাঝপথে এসে গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। ওই তালিকায় বেকারিপণ্য, বিস্কুট ও কেকও ছিল। এসব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এরপর সমালোচনার মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭.৫ শতাংশ করা হয়। গত রমজানে নিত্যপণ্য বিবেচনায় নিয়ে এক মাসের জন্য কর ছাড় দেওয়া হলেও, এসব পণ্যে ৭.৫ শতাংশ কর বহাল রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রমজানে যখন এই খাদ্যপণ্যগুলোকে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে বিবেচনা করে ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়, তখন বছরের বাকি সময়ে তা আবার কীভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ পণ্য হয়ে পড়ে? 

গবেষণার উপসংহারে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট দরিদ্রদের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এবং তাদের সাশ্রয়ী খাবার পাওয়ার সুযোগ আরও সীমিত করে তুলছে। সরকারের উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল করা অথবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে এবং মৌলিক পুষ্টি নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বিলাসপণ্যের ওপর কর বাড়িয়ে একটি ন্যায্য অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর বল ছ ন র জন য ৭ ৫ শত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। 

আগামী বছরের ১-২৩ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে নারী এশিয়া কাপ। ১২ দলের এই টুর্নামেন্টের ড্র সিডনিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ দুপুরে। যেখানে শক্তিশালী গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। 

‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া। জাঁকজমকপূর্ণ ড্রতে বাংলাদেশ ছিল চার নম্বর প্লটে। সঙ্গী ছিল ইরান ও ভারত। গ্রুপিং ড্রতে টুর্নামেন্টের একমাত্র অভিষিক্ত দল বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের তৃতীয় দল নির্বাচিত হয়। 

পরের রাউন্ডে ‘বি’ গ্রুপের চতুর্থ দল হয় উজবেকিস্তান। এরপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চীন বাংলাদেশের গ্রুপের দ্বিতীয় দল হয়। সবশেষ দল হিসেবে এই গ্রুপে যুক্ত হয় উত্তর কোরিয়া। যারা ২০১০ সালে প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিল। 

ড্র অনুষ্ঠানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও এএফসি অংশগ্রহণকারী সকল দেশের অধিনায়ক ও কোচকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া বাংলাদেশের কেউ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেনি। গতকাল অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কোচ, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করে হারবার ব্রিজের সামনে। সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ছাড়া, তাইওয়ান,ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল দুর্বার। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ পড়েছিল কঠিন ‘সি’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল বাহরাইন (র‌্যাঙ্কিং ৯২), তুর্কমেনিস্তান এবং স্বাগতিক মিয়ানমার (র‌্যাঙ্কিং ৫৫)। র‌্যাঙ্কিংয়ের বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে বোঝার উপায় ছিল না। 

প্রথম ম্যাচেই বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলের নৈপুণ্যে ২-১ ব্যবধানে হারায় মিয়ানমারকে। শেষ ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকেও ছাড়েনি মেয়েরা। ৭-০ গোলের দাপুটে জয় তুলে নেয় তারা।

এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগামী বছর মার্চে বসবে টুর্নামেন্টের ২১তম আসর, যেখানে খেলবে ১২টি দেশ। 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেনে নিন, জান্নাতি ২০ সাহাবির নাম
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধনা দিল জাবি
  • অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়া কাপ: শক্তিশালী গ্রুপে বাংলাদেশ 
  • ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে ২ দিনব্যাপী অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ কর্মশালা
  • ১২ হাজার তরুণ–তরণীকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেবে পিকেএসএফ