প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, গণভোটের পক্ষে জামায়াত
Published: 14th, April 2025 GMT
প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে একমত জামায়াতে ইসলামী। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের সুপারিশের পক্ষেও মত দিয়েছে দলটি। তবে তারা প্রস্তাবিত এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চান না। দলটি চায় কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; তবে সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরই থাকুক।
ঐকমত্য কমিশনে জামায়াত এসব মতামত দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং নির্বাচন পদ্ধতিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের অবস্থান বিএনপির বিপরীত।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেন, জামায়াত তার অবস্থান জানিয়েছে। অন্য দল কী চায়, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০, দুদক সংস্কার কমিশনের ২০, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২৬, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ২৩ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের ২৭ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড.
মোট ১৬৬ সুপারিশের ৭৭টিতে জামায়াত একমত। আংশিক একমত ৩৬ সুপারিশে। একমত নয় বলে জানিয়েছে ৫৩ সুপারিশে। সংবিধান সংস্কারে ৩১ সুপারিশে একমত, ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত এবং ২৩ সুপারিশে একমত নয় বলে জানিয়েছে তারা।
সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে– তা জানতে চেয়ে ছয়টি বিকল্প দিয়েছিল কমিশন। এগুলো হলো– অধ্যাদেশ, গণভোট, নির্বাচনের সময় গণভোট, গণপরিষদ, নির্বাচনের পর সংসদে সংস্কার এবং গণপরিষদ হিসেবে সংসদ নির্বাচন। বিএনপি গণপরিষদ, গণভোটের সুপারিশ নাকচ করেছে। জামায়াত এ বিষয়ে মতামত জানায়নি। তাহলে কীভাবে কী সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে– জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এটা কমিশন ও সরকার ঠিক করুক।
বিএনপি মতামত দিয়েছে, কোনো ব্যক্তি টানা দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর একবার বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। দুই দলই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে রাজি হলেও, বিএনপি
চায় নিম্নকক্ষের নির্বাচন বিদ্যমান পদ্ধতিতেই হবে। উচ্চকক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নয়, গঠিত হবে নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে। জামায়াত উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন চায়। নিম্নকক্ষ যদি আনুপাতিক পদ্ধতিতে গঠিত হয়, তাহলে উচ্চকক্ষের কী প্রয়োজন– এ প্রশ্নের জবাবে গোলাম পরওয়ার বলেন, পেশিশক্তিসহ নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনই শ্রেয়।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার মাধ্যমে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন বলে যে সুপারিশ কমিশন করেছে বিএনপি তাতে একমত না হলেও, জামায়াত রাজি। বিএনপি এনসিসি গঠনের বিরোধী। তবে দুই দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সর্বশেষ প্রধান বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে রাজি, মেয়াদ নয়
সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। জামায়াত এর সঙ্গে একমত। তবে সংসদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ ৪ বছর নয়, ৫ বছরই বহাল রাখার পক্ষে দলটি। কমিশন প্রস্তাব করেছিল, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে সংসদ নেতা এবং দলীয়প্রধান হতে পারবেন না। জামায়াত এতে একমত হয়নি। দলটি মত দিয়েছে, একই ব্যক্তি সংসদ নেতা ও দলীয়প্রধান হতে পারবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী দলীয়প্রধান হতে পারবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিনি সংসদ নেতা হতে পারবেন না।
কমিশন ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে, যাতে সংসদ সদস্যরা নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারেন। জামায়াত আংশিক একমত জানিয়ে ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিলের পক্ষে মত দিয়েছে। দলটি চায়, দলীয় এমপি অর্থবিল এবং আস্থা প্রস্তাব বাদে অন্যান্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
বিদ্যমান সংবিধানে ৪৮(৩), ৫৬(২) অনুচ্ছেদ এবং রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতা ভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ বাদে বাকি সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সম্পাদন করতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে কমিশন এনসিসি গঠনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের দুই কক্ষের স্পিকার, বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত দুই ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং সরকারি ও প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলো থেকে একজন নির্বাচিত সদস্যকে নিয়ে গঠিত হবে।
কমিশন সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশন, কর্মকমিশন, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিয়োগ হবে এনসিসির মাধ্যমে। ৯ সদস্যের এনসিসির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সম্মতিতে নিয়োগ হবে। জামায়াত এতে একমত হলেও, বলেছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি এনসিসির সদস্য হতে পারবেন না।
দলের এ অবস্থান সম্পর্কে গোলাম পরওয়ার সমকালকে বলেন, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক পছন্দে নিয়োগ হয়। তাই তাঁকে এনসিসিতে না রাখাই উত্তম। বিচারাঙ্গনকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে প্রধান বিচারপতিকেও এনসিসিতে রাখা ঠিক হবে না।
এনসিসি গঠনের বিরোধী বিএনপি বলছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর হাতে না থাকলে সরকারপ্রধানের ক্ষমতাই থাকবে না। জামায়াত এর বিরুদ্ধে। দলটির মত, প্রধানমন্ত্রী শুধু নির্বাহী বিভাগে ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, কেউ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না। বিএনপি এতে একমত না হলেও, জামায়াত রাজি।
উভয় কক্ষেই আনুপাতিক পদ্ধতি চায়
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ইচ্ছামাফিক সংবিধান বদলে দেওয়ার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করেছে। জামায়াত দ্বিকক্ষের সংসদ চাইলেও, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৪ নয়, ৫ বছর মেয়াদ চায়।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নকক্ষ হবে ৪০০ সদস্যের। ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনে শুধু নারীরা নির্বাচিত হবেন। এতে রাজি নয় জামায়াত। দলটির মত, নিম্নকক্ষে ৩০০ আসনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তত শতাংশ আসন পাবে। ৫০টি নারী আসন দলগুলোর মধ্যে এমপির সংখ্যা অনুযায়ী বণ্টন হবে।
তবে মোট আসনের ১০ শতাংশ তরুণদের জন্য সংরক্ষণে আংশিক একমত জানিয়েছে জামায়াত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমিয়ে ২১ নির্ধারণেও একমত তারা। উভয় কক্ষে একমাত্র ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নির্বাচন চায় জামায়াত। কমিশন প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের ১০০ আসন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। জামায়াত এতে একমত। তবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পাঁচজন সদস্য মনোনয়নের বিরোধিতা করেছে তারা।
কাটাছেঁড়া রোধে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদন এবং গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করেছে কমিশন। বিএনপি গণভোটের সুপারিশে দ্বিমত জানালেও জামায়াত রাজি।
সংসদের নিম্নকক্ষ আনুপাতিক নির্বাচনে গঠিত হলে সরকার এককভাবে গঠনে কোনো দলকে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। বাংলাদেশে স্বচ্ছ হিসেবে স্বীকৃত কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দল এককভাবে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। ফলে স্থায়ী সরকার পাওয়া কঠিন হেব। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় বিএনপি এতে রাজি নয়।
স্থায়ী সরকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইচ্ছামাফিক সংবিধান বদল বন্ধে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করেছে কমিশন। সংবিধান সংশোধনের জন্য উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনো দলকে নির্বাচনে ৬৬ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। এর পরও জামায়াত কেন নিম্নকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন চায় এ প্রশ্নে দলটির একজন নেতা সমকালকে বলেছেন, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন নিশ্চিত করতেই জামায়াত কৌশলের অংশ হিসেবে উভয়কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতি চাইছে। যাতে অন্তত উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতি নিশ্চিত হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় জামায়াত
কমিশন সুপারিশ করেছে, সংসদ ভেঙে গেলেও এনসিসি থাকবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার মনোনীত দুই উপদেষ্টা সদস্য হবেন। জামায়াত এতে একমত নয়। দলটি মত দিয়েছে, সংসদ ভেঙে গেলে এনসিসিও বিলুপ্ত হবে।
কমিশন প্রস্তাব করেছে, ৯ সদস্যের এনসিসির ৭ জনের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। এমন কাউকে পাওয়া না গেলে এনসিসির ছয় সদস্যের সমর্থনে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে একজন প্রধান উপদেষ্টা হবেন। এটও সম্ভব না হলে এনসিসির সর্বসম্মতিতে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন। তবে জামায়াত এতে একমত নয়। দলটি চায় আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে চার মাস। কোনো কারণে নির্বাচন সম্ভব না হলে মেয়াদ দুই মাস পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। তবে বিএনপি চেয়েছে, কোনোভাবেই নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনের বেশি হবে না।
আরও নানা বিষয়ে মতামত
কমিশন প্রস্তাব করেছে সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য এবং প্রস্তাবিত জেলা সমন্বয় পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। জামায়াত এতে একমত নয়। দলটি চায় এমপিদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। দলটি সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়েছে।
জামায়াত জানিয়েছে, তারা দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন বাংলা বাদে অন্য ভাষাকে স্বীকৃতির সুপারিশে রাজি নয়। বিদ্যমান সংবিধানে ৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধান বাতিল বা পরিবর্তনের চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে গণ্য হবে। কমিশন এই অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ করেছে। জামায়াত এতে আংশিক একমত। তারা জানিয়েছে, অভ্যুত্থান, গণবিপ্লব বাদে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান বাতিল, পরিবর্তনের চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
সংস্কার কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি করার প্রস্তাব করেছে। জামায়াত এতে আংশিক একমত হয়েছে। তারা বহুত্ববাদ নয়, ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’কে মূলনীতি হিসেবে পুনর্বহালে মত দিয়েছে।
জামায়াত রাজনৈতিক দলের তথ্য উন্মুক্ত করার পক্ষে নয়। নিবন্ধন পদ্ধতিও বাতিল চেয়েছে দলটি। প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রচলনের বিরোধিতা করেছে জামায়াত। জেলা পরিষদ বাতিলের সুপারিশেও একমত নয় তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারের ২০ সুপারিশের ১১টিতে একমত জামায়াত। ৫টিতে আংশিক একমত, অন্য চারটিতে একমত নয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ২৭ প্রস্তাবের ১৩টিতে তারা একমত। ১০টিতে একমত নয়। বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের ১৫টিতে তারা একমত। একটিতে একমত নয়। জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬ সুপারিশের ১৫টিতে জামায়াত একমত নয়। একমত হয়েছে সাতটিতে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ গ ল ম পরওয় র আ শ ক একমত প রস ত ব ত জ ম য় ত এত র ষ ট রপত ন ম নকক ষ অন চ ছ দ মত দ য় ছ প রব ন ন ব যবস থ সরক র র সদস য র গণভ ট র এনস স র একমত ন একমত জ মত জ ন অন য য় গঠন র ব এনপ দলগ ল মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।