হিন্দি জোর করে চাপানো নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রে অশান্তি
Published: 19th, April 2025 GMT
জোর করে হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর বিদ্রোহের পর এবার অশান্তি দেখা দিল ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে। সেখানে স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি ভাষা শিক্ষা আবশ্যিক করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ত্রিভাষা শিক্ষার ওপর জোর দিতে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ সম্প্রতি এই সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। অশান্তি সে নিয়েই।
মহারাষ্ট্রে প্রথম ভাষা মারাঠি। দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি। তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দিকে ঐচ্ছিক না রেখে বিজেপি নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ তা আবশ্যিক ঘোষণা করেছেন। ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই নীতি চালু করতে সরকারি ফরমান জারি হয়েছে। সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ।
মারাঠি অস্মিতায় নির্ভর করেই বালাসাহেব ঠাকরে গড়ে তুলেছিলেন শিবসেনা। সেই সেনায় ভাঙন ধরিয়ে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) গড়ে তুলেছিলেন বালাসাহেবের ভাইপো রাজ ঠাকরে। দ্বিতীয়বার সেনায় ভাঙন ধরিয়ে বিজেপির সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন একনাথ শিন্ডে। ২০২৪ সালের ভোটের পর বিজেপির মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে শিন্ডে এখন ফাডনবিশ মন্ত্রিসভার উপমুখ্যমন্ত্রী। জবরদস্তি হিন্দি চাপানোয় তিনিও ক্ষুব্ধ, যদিও এখনো সরাসরি ও প্রকাশ্যে তিনি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেননি।
হিন্দির বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব এমএনএস নেতা রাজ ঠাকরে। গত লোকসভা ভোটে প্রাসঙ্গিক থাকতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলালেও হিন্দি ভাষা শিক্ষা আবশ্যিক করার বিরুদ্ধে তিনি জোরাল প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মারাঠি স্বাভিমান ও অস্মিতার স্বার্থে হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে রাজ বলেছেন, আমরা হিন্দু, কিন্তু হিন্দিভাষী নই। আমরা মারাঠি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানা মারাঠিদের পক্ষে কঠিন। রাজ বলেছেন, জবরদস্তি হিন্দি চাপানো মারাঠি অস্মিতার ওপর চরম আঘাত। মারাঠা ভূমিতে হিন্দির এই আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না।
হিন্দির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর ঠিক আগে রাজ ঠাকরে দেখা করেছিলেন একনাথ শিন্ডের সঙ্গে। তারপরই এই সিদ্ধান্ত। মনে করা হচ্ছে, এমএনএসের এই আন্দোলনের পেছনে শিন্ডের সমর্থন রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছু কারণে রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে শিন্ডের শিবসেনার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়ায় বিজেপির ওপর তিনি অসন্তুষ্ট।
হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতৃত্বও। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াডেট্টিয়ার বলেছেন, হিন্দি যেমন ঐচ্ছিক ছিল, তেমনই রাখা যেত। মারাঠি ও ইংরেজির সঙ্গে কেন তাকে বাধ্যতামূলক করে শিক্ষার্থীদের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে? এ থেকে স্পষ্ট, আঞ্চলিক স্পর্শকাতরতার প্রতি বিজেপি শ্রদ্ধাশীল নয়। প্রদেশ কংগ্রেস দাবি করেছে, বাধ্যতামূলক নির্দেশনা বাতিল করা হোক। হিন্দিকে ঐচ্ছিক করা হোক। এমএনএসের মতো কংগ্রেসও মনে করে, এর ফলে রাজ্যে মারাঠি ও অমারাঠিদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হবে।
রাজ্য রাজনীতিতে এমএনএস তেমন প্রাসঙ্গিক না হলেও মুম্বাইয়ে তারা শক্তিহীন নয়। হিন্দির বিরোধিতায় মারাঠি অস্মিতাকে তুলে ধরার এই রাজনীতির পেছনে মনে করা হচ্ছে, বৃহন্মুম্বাই পৌরসভার আসন্ন ভোটে ভালো ফল করতে এমএনএস ব্যগ্র।
বৃহন্মুম্বাই ভারতের সবচেয়ে ধনী পৌরসভা। বিজেপি ঠিক করেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে তারা আলাদা লড়বে। এতে বিপাকে পড়েছে এমএনএস ও শিন্ডে সেনা। হিন্দিকে কেন্দ্র করে শিন্ডে ও রাজ ঠাকরে কাছাকাছি এলে মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে মারাঠি ভোটে অন্য মেরুকরণ ঘটতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র র জ ঠ কর র জন ত মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান