হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সীমানা প্রাচীরের ভেতরের শতবর্ষী গাছ কাটার প্রতিবাদ ও নতুন গাছ রোপণের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) হবিগঞ্জ জেলা শাখা।

রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ধরার এক প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। জেলা প্রশাসক মো.

ফরিদুর রহমান স্মারকলিপি গ্রহণকালে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ধরা জেলা শাখার আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনি ও যুগ্ম-সদস্য সচিব সিদ্দিকী হারুন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সীমানার ভেতরের কয়েকটি মূল্যবান ও পরিপক্ক গাছ কর্তন করা হয়েছে। এই বৃক্ষগুলো দীর্ঘকাল ধরে অত্র এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বায়ু দূষণ হ্রাস এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। বৈশ্বিক ঊষ্ণায়নের এই দুর্যোগের সময়ে আকস্মিক ও অপরিকল্পিতভাবে এই গাছগুলো কেটে ফেলায় পরিবেশের উপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 
এতে আরো বলা হয়, গাছ কাটা শুধু পরিবেশের ক্ষতিই করেনি বরং স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একটি সুস্থ ও সবুজ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য বৃক্ষের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য।

আরো পড়ুন:

নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ নিয়ে গুজবের ছড়াছড়ি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ 

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, অবিলম্বে জেলা পরিষদ মিলনায়তনের পাশে নির্বিচারে গাছ কাটার কারণ তদন্ত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের কার্যকলাপ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্তনকৃত গাছগুলোর স্থানে এবং হবিগঞ্জের অন্যান্য উপযুক্ত স্থানে দ্রুত স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী নতুন গাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বৃক্ষ কর্তনের প্রয়োজন দেখা দিলে পরিবেশের উপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করা এবং পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের মতামত নিতে হবে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে ধরা হবিগঞ্জ শাখার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক তাহমিনা বেগম গিনি, সদস্য সচিব তোফাজ্জল সোহেল, যুগ্ম সদস্য সচিব সিদ্দিকী হারুন, নির্বাহী সদস্য আব্দুল হান্নান, আলোকচিত্রী আশীষ দাস, সমাজকর্মী রেজাউল হাসান রাজু ও খাদিজা আক্তার লিমা।

ঢাকা/মামুন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প পর ব শ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা