ষাটের দশকের হেঁশেলের চিত্র ‘খাদ্যবিলাস’
Published: 22nd, April 2025 GMT
ষাটের দশকে এখনকার মতো ঘরে ঘরে ফ্রিজ, প্রেসার কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডার ছিল না। রান্না ঘরের প্রয়োজনীয় তৈজস থেকে শুরু করে রান্নার উপকরণগুলোও ছিল সীমিত ও ধীরগতির। ব্যক্তি, পরিবার ভেদে আলাদা আলাদা আভিাজাত্য ছিল খাবার পরিবেশনায়। ষাটের দশকের রান্না নিয়ে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে আনোয়ারা তরফদারের বই ‘খাদ্যবিলাস’।
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে, শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে। এই নিয়ে আনোয়ারা তরফদারের মেয়ে ও কবি শামীম আজাদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘১৯৮৯ সালে আমার বন্ধু কবি আবিদ আজাদ তার শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে অতি যত্নে আম্মার এ বইটি প্রকাশ করেছিলেন। আজ তিন দশক পরে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এর চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়কের আগ্রহে এর দ্বিতীয় সংস্করণ বের হল। সে জন্য তাঁকে ও পাঞ্জেরী প্রকাশণাকে ধন্যবাদ। কে জানে হয়তো এ কারনেই আরো কিছুদিন আনোয়ারা তরফদারের রান্নার লেগেসি রয়ে যাবে। আর নিশ্চিত রয়ে যাবে তরফদার পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম, তারই পৌত্র লাবিব তরফদারের রেসিপিতে।’’
শামীম আজাদের ওই পোস্টে উল্লেখ করেছেন, মায়ের হাতের শুকনো মরিচ ও রসুনে ফোঁড়ন দেওয়া কচি লালশাক, সরিষা বাটা ও পটলের খোসা ভর্তার লাড্ডু, কড়কড়ে ভাজা ডিমভরা ইলিশ, পাঁচ ফোড়ন দেওয়া ঘন জলপাই ও ডালের কথা।
আরো পড়ুন:
যে রং দেখা যায় না
ওজন কমাতে ‘ডাবল কার্বিং’ এড়িয়ে যাওয়া কেন জরুরি
তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার মা কোন কিছুরই খোসা না ফেলে তা দিয়ে হয় ভর্তা, নয় স্টক করতেন। সে স্টক দিয়ে স্যুপ বা কারি রান্নার সময় গরম জলের বিকল্প করতেন। গ্রামে গেলে হাঁটতে হাঁটতেই ঝোপঝাড় থেকে তুলে নিতেন বতুয়া, থানকুনি, বুনো কচু, শেয়ালমূর্তি শাক। অমৃত রান্না হত সেসব দিয়ে।…কি খাইনি! শাপলার নরম ডাঁটা দিয়ে ইলিশের মাথা ভেঙে রেঁধে নামাবার আগেই আম্মা দিতেন তাজা ধনেপাতা।’’
বইটি নিয়ে অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বলেন, ‘‘ খাদ্যবিলাস শুধু রন্ধন প্রক্রিয়ার একটি গ্রন্থ নয়, এটি নিছক ঘরকন্যা ভাষ্যও নয়, এটি একটি সময়ের সমাজচিত্রও বটে। একটি সময়ের মধ্যবিত্ত সংসারের খাদ্যসংস্কৃতি এ বইটিতে প্রতিফলিত।’’
উল্লেখ্য, আনোয়ারা তরফদার জন্ম গত শতকের ত্রিশের দশকে বৃহত্তর সিলেটে জন্ম গ্রহণ করেন। স্বামী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। স্বামীর চাকরিসূত্রে তিনি অবিভক্ত ভারতের আসাম ও পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন। বাঙালির চিরায়ত রান্নায় আনোয়ারা তরফদারের ছিল বিশেষ পারদর্শিতা।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তরফদ র র র দশক
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যারা
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ফলে নতুন নেতৃত্বের দিকে মুখিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
রাকসু শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন নয়, এটি দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব গঠনের একটি সংগঠন। ১৯৬০–৮০ পর্যন্ত রাকসুর মাধ্যমে যারা উঠে এসেছেন, পরে তাদের মধ্য থেকে অনেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাকসু)। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৬ বার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের বিধান রেখে রাকসুর আচরণবিধি প্রকাশ
যৌথ বিবৃতি প্রত্যাখান করে বাহা’কে বয়কট ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
১৯৮৯ সালে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হলেও তার আগের কয়েক দশকে এখান থেকে উঠে এসেছেন বর্তমান জাতীয় রাজনীতির বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ। ইতিহাসের পাতায় তারা রাকসুতে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঠিক তেমনই দৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন জাতীয় রাজনীতির মঞ্চেও।
১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) ছিলেন আবু সাইয়িদ। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংসদ সদস্যও ছিলেন।
১৯৭৩-৭৪ মেয়াদে রাকসুর ভিপি ছিলেন নুরুল ইসলাম ঠান্ডু। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন এবং তার নিজ এলাকায় এমপি পদপ্রার্থী ছিলেন।
১৯৭৪-৭৫ সালে রাকসুর ভিপি ছিলেন ফজলুর রহমান পটল। পরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি রাজনীতিতে প্রতিভাবান ছিলেন।
সত্তরের দশকে রাকসুর জিএস ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক টুকু। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৮০-৮১ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভিপি ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা। বাম রাজনীতির এই প্রবীণ নেতা বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৯৮৯-৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও মুখপাত্র।
১৯৮৯-৯০ সালের একই নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হন রুহুল কুদ্দুস বাবু। পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি।
নূরুল ইসলাম বুলবুল ১৯৯০ সালে রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের জিএস নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নির্বাচিত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, জাতীয় নেতৃত্ব গঠনের এই ঐতিহাসিক প্ল্যাটফর্মটি ৩৫ বছর পর আবারও সক্রিয় হচ্ছে ফলে একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়বে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বও গড়ে উঠবে এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম হিসেবে রাকসু কাজ করলেও এর একটি জাতীয় আবেদন রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতোপূর্বেও রাকসুর নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে ছিল। রাকসু বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পলিটিক্যাল আউটপুট পাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর তাই জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার হতে পারে রাকসু।”
রাকসু নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, “রাকসু ছিল এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যা তরুণদের চিন্তা-ভাবনা, বক্তৃতা ও নেতৃত্বের ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র তৈরি করত। রাকসুতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তীকালে জাতীয় সংসদ, মন্ত্রিসভা বা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের বিচরণ লক্ষণীয়।”
তবে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাকসুর নির্বাচন না হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন এমন নেতৃত্ব সৃষ্টির সুযোগ হারাচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই রাকসুর নাম জানলেও, তার ইতিহাস ও গৌরব গাঁথা জানেন না। তবে আশার দিক রাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরেকটু সময় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে পারলে রাকসু সব শিক্ষার্থীর প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী