কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষায় দ্বিতীয় দিনের মতো বাকৃবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 22nd, April 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিএসসি ডিগ্রিধারী কৃষিবিদদের অধিকার রক্ষা ও বৈষম্যের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‘কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি করেন।
কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপাচার্যের বাসভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকা প্রদক্ষিণের পর প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমতলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এতে কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কৃষি অনুষদের সব ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন চত্বরে তাঁরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কৃষিতে ডিপ্লোমাধারীরা ২০২৪ সালের পরও সরকারি নিয়োগে সংরক্ষিত আসনের দাবি করছেন। এটি একেবারেই অনৈতিক। খামারবাড়ি দখলের মতো কাজ করে ডিপ্লোমাধারীরা অনধিকার চর্চা করছেন এবং এখন তারা এমন কিছু দাবি তুলছেন, যেগুলো বাস্তবতা ও পেশাগত ন্যায্যতার পরিপন্থী।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, পদোন্নতির নামে নবম গ্রেডের চাকরির দাবি শুধু অযৌক্তিকই নয়; বরং তা অবৈধ। তাঁরা এসএসসি ও এইচএসসিতে সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে পড়ার সুযোগ পান। এরপর চার বছরের স্নাতক শিক্ষা শেষ করে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নবম গ্রেডের গেজেটেড কর্মকর্তা হন। অথচ ডিপ্লোমাধারীরা সরাসরি বা পদোন্নতির মাধ্যমে ওই গ্রেডে পৌঁছানোর দাবি করছেন। যা তাঁদের ত্যাগ ও মেধার সম্পূর্ণ অপমান।
সমাবেশ শেষে বিকেলে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক জি এম মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের যে সম্মান ও মর্যাদা, তা ডিপ্লোমাধারীদের সঙ্গে এককাতারে ফেললে দেশের কৃষিবিদ পেশার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে। যাঁর যেমন যোগ্যতা, তাঁকে তেমন মর্যাদা দেওয়া উচিত। না হলে কৃষি খাতের সার্বিক ক্ষতি হতে পারে।’
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার কাছে ছয়টি দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন আন্দোলনকারীরা। দাবির মধ্যে আছে—কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (নবম গ্রেড) পদে বিসিএস ছাড়া কোনোভাবেই নিয়োগ না দেওয়া; দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি বন্ধ রাখা; দশম গ্রেডের পদগুলোকে গেজেটেড কাঠামোর বাইরে রাখা; বিএডিসিসহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমাধারীদের নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ বন্ধ করা; ডিপ্লোমাধারীদের জন্য কোনো বিশেষ ছাড় দিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত না করা এবং ‘কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহারে কৃষিবিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বিএসসি কৃষিবিদদের ছয় দফা দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে এবং কৃষিবিদদের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সব সময় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নবম গ র ড
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।