Samakal:
2025-06-15@23:48:49 GMT

নিজের যত্ন নিন

Published: 22nd, April 2025 GMT

নিজের যত্ন নিন

আপন স্বাস্থ্য কার না প্রিয়? অথচ কর্মমুখী ব্যস্ততা, চারপাশের দায়িত্ব ও সামাজিক চাপে আমরা নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি ভুলে যাই। যার ফলে রোগব্যাধি কিংবা বিষণ্নতায় দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। নিজের যত্ন নেওয়া বলতে দামি স্কিন কেয়ার কিংবা স্পা নয়। নিজের যত্ন বলতে আপনার শারীরিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য– সবকিছু যত্ন নিতে হবে।
শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও জীবনকে রঙিন করতে পারে। অনেকে শারীরিক সুস্থতাকে প্রাধান্য দিলেও মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্বহীন মনে করে, যা একদম করা উচিত নয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু অভ্যাস আমাদের জীবনকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী করবেন
মেডিটেশন বা ধ্যান: মেডিটেশন এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, কর্টিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট সময় মেডিটেশন করলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মন শান্ত থাকবে। একই সঙ্গে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অবসরে নিজের পছন্দের কাজগুলো উপভোগ করুন 
অবসরের ভালো লাগা ও প্রশান্তির জন্য বেছে নিন নিজের পছন্দের কাজের অনুশীলন। সেটি হতে পারে বই পড়া, গান শোনা, নিজের জন্য বা আপনার প্রিয়জনের জন্য রান্না করা, আপনার কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তার সান্নিধ্যে সময় কাটানো, ছোটদের সঙ্গে গল্প করা বা পরিবারের সঙ্গে কোনো সিনেমা দেখা। সর্বোপরি যেসব কাজ আপনাকে খুশি করে, তা করার চেষ্টা করুন। 
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
অবসর বলতে এখন আমরা অনেকেই মনে করি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা সোশ্যাল  মিডিয়ায় সময় কাটানো। এ অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও হতাশার জন্ম দেয়। তাই কখনও কখনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। এর পাশাপাশি মনে প্রশান্তিও বাড়ে।
বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে কথা বলুন 
একাকিত্ব মানসিক রোগের একটি প্রধান কারণ। তাই সময় পেলে নিজের বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সঙ্গে কথা বললে মনে প্রশান্তি অনুভব করবেন। আপনার প্রতিদিনের ভাবনা কিংবা জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যজনের সঙ্গে ভাগ করে নিলে অনেক সময় বিষণ্ন মনও হালকা হয়ে যায়। এতে হতাশা কিংবা হীনম্মন্নতা মন থেকে দূর হয়। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ এবং কাছের মানুষের সান্নিধ্য বিচ্ছিন্নতা কমায়।
নতুন দক্ষতা চর্চা করুন
গবেষণায় দেখা যায়, নতুন দক্ষতা শেখা মানসিক সুস্থতা উন্নয়নে সহায়ক। কর্মক্ষেত্রে অথবা শখের বসে নতুন কোনো দক্ষতা আপনার মনের কোণে সুখের দোলা দেয়। এটি হতে পারে ক্রাফটিং, চিত্রাঙ্কন, সেলাই, রংতুলি দিয়ে রাঙানো, নতুন স্কিল অর্জন বা উদ্ভাবনী চিন্তা করা। এটি আপনার মন ফুরফুরে রাখবে। একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী করতে সাহায্য করবে। 
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন
যেকোনো সিদ্ধান্ত, মতামত বা অভিজ্ঞতা থেকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা উচিত। কারণ নেতিবাচক মনোভাব আমাদের মনকে বিষিয়ে তোলে। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে সেই কাজ শুরু করতে হবে। অতীতে ঘটে যাওয়া খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা সহায়ক নয়। নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে থাকুন। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মনকে দুর্বল করে এবং হতাশা তৈরি করতে পারে।
বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দিন
বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দিলে আপনার মানসিক সুস্থতা উন্নত হবে। এ মুহূর্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, শরীর ও চারপাশের জগৎ। কেউ কেউ এ আত্মসচেতনতাকে ‘মাইন্ডফুলনেস’ বলে। মাইন্ডফুলনেস আপনার জীবনকে আরও উপভোগ করতে ও নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
না বলতে শিখুন
সময় বাঁচাতে না বলতে শিখুন। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ এড়িয়ে যান।
‘মেন্টাল হেলথ আমেরিকা’-এর তথ্য অনুযায়ী, আপনি যদি সবসময় অন্যদের খুশি করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার নিজের মানসিক চাপ বেড়ে যায়। তাই সময়মতো না বলতে শিখুন। 
এতে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিজের যত্ন নেওয়া মানে 

নিজেকে ভালোবাসতে হবে। মনে রাখবেন, এ ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয়, বরং আত্মসচেতনতার একটি রূপ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন জ র যত ন ন আম দ র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি