আপন স্বাস্থ্য কার না প্রিয়? অথচ কর্মমুখী ব্যস্ততা, চারপাশের দায়িত্ব ও সামাজিক চাপে আমরা নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি ভুলে যাই। যার ফলে রোগব্যাধি কিংবা বিষণ্নতায় দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। নিজের যত্ন নেওয়া বলতে দামি স্কিন কেয়ার কিংবা স্পা নয়। নিজের যত্ন বলতে আপনার শারীরিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য– সবকিছু যত্ন নিতে হবে।
শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও জীবনকে রঙিন করতে পারে। অনেকে শারীরিক সুস্থতাকে প্রাধান্য দিলেও মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্বহীন মনে করে, যা একদম করা উচিত নয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কিছু অভ্যাস আমাদের জীবনকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী করবেন
মেডিটেশন বা ধ্যান: মেডিটেশন এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, কর্টিসলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট সময় মেডিটেশন করলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মন শান্ত থাকবে। একই সঙ্গে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অবসরে নিজের পছন্দের কাজগুলো উপভোগ করুন
অবসরের ভালো লাগা ও প্রশান্তির জন্য বেছে নিন নিজের পছন্দের কাজের অনুশীলন। সেটি হতে পারে বই পড়া, গান শোনা, নিজের জন্য বা আপনার প্রিয়জনের জন্য রান্না করা, আপনার কোনো পোষা প্রাণী থাকলে তার সান্নিধ্যে সময় কাটানো, ছোটদের সঙ্গে গল্প করা বা পরিবারের সঙ্গে কোনো সিনেমা দেখা। সর্বোপরি যেসব কাজ আপনাকে খুশি করে, তা করার চেষ্টা করুন।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
অবসর বলতে এখন আমরা অনেকেই মনে করি কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো। এ অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও হতাশার জন্ম দেয়। তাই কখনও কখনও ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়। এর পাশাপাশি মনে প্রশান্তিও বাড়ে।
বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে কথা বলুন
একাকিত্ব মানসিক রোগের একটি প্রধান কারণ। তাই সময় পেলে নিজের বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সঙ্গে কথা বললে মনে প্রশান্তি অনুভব করবেন। আপনার প্রতিদিনের ভাবনা কিংবা জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যজনের সঙ্গে ভাগ করে নিলে অনেক সময় বিষণ্ন মনও হালকা হয়ে যায়। এতে হতাশা কিংবা হীনম্মন্নতা মন থেকে দূর হয়। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ এবং কাছের মানুষের সান্নিধ্য বিচ্ছিন্নতা কমায়।
নতুন দক্ষতা চর্চা করুন
গবেষণায় দেখা যায়, নতুন দক্ষতা শেখা মানসিক সুস্থতা উন্নয়নে সহায়ক। কর্মক্ষেত্রে অথবা শখের বসে নতুন কোনো দক্ষতা আপনার মনের কোণে সুখের দোলা দেয়। এটি হতে পারে ক্রাফটিং, চিত্রাঙ্কন, সেলাই, রংতুলি দিয়ে রাঙানো, নতুন স্কিল অর্জন বা উদ্ভাবনী চিন্তা করা। এটি আপনার মন ফুরফুরে রাখবে। একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী করতে সাহায্য করবে।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন
যেকোনো সিদ্ধান্ত, মতামত বা অভিজ্ঞতা থেকে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা উচিত। কারণ নেতিবাচক মনোভাব আমাদের মনকে বিষিয়ে তোলে। কোনো কাজে ব্যর্থ হলে হতাশ না হয়ে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে সেই কাজ শুরু করতে হবে। অতীতে ঘটে যাওয়া খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা সহায়ক নয়। নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে থাকুন। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মনকে দুর্বল করে এবং হতাশা তৈরি করতে পারে।
বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দিন
বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দিলে আপনার মানসিক সুস্থতা উন্নত হবে। এ মুহূর্তের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, শরীর ও চারপাশের জগৎ। কেউ কেউ এ আত্মসচেতনতাকে ‘মাইন্ডফুলনেস’ বলে। মাইন্ডফুলনেস আপনার জীবনকে আরও উপভোগ করতে ও নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
না বলতে শিখুন
সময় বাঁচাতে না বলতে শিখুন। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ এড়িয়ে যান।
‘মেন্টাল হেলথ আমেরিকা’-এর তথ্য অনুযায়ী, আপনি যদি সবসময় অন্যদের খুশি করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার নিজের মানসিক চাপ বেড়ে যায়। তাই সময়মতো না বলতে শিখুন।
এতে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিজের যত্ন নেওয়া মানে
নিজেকে ভালোবাসতে হবে। মনে রাখবেন, এ ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয়, বরং আত্মসচেতনতার একটি রূপ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন জ র যত ন ন আম দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা