কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি, আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন
Published: 23rd, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আজ বুধবার অনশন শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এদিকে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার বিকেল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
দুপুর ১২টার দিক ক্যাম্পাসের মহুয়া মঞ্চে অনশন শুরু করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৮ নেতা-কর্মী। তাঁরা হলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক তৌহিদ সিয়াম, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম ইমন ও জিয়াউদ্দিন আয়ান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মেহরাব তুর্য।
আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই উপাচার্য তাঁর পদের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তাঁর আর এক মুহূর্ত ওই পদে থাকার অধিকার নেই। অবিলম্বে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।’
তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘এই কুয়েট রিলেটেড ইস্যুতে সারা বাংলাদেশে যদি একজন ছাত্রেরও কিছু হয়, যদি কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করেন, তাহলে আমরা মনে করি ছাত্র উপদেষ্টাদের গদিতে থাকার দরকার নেই। তাঁরা অপারগতা স্বীকার করে পদত্যাগ করুক।’
প্রতীকী অনশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের ফটকে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বঞ্চিত শিশুদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী
শৈশব শেষের আগেই অধিকারবঞ্চিত অনেক শিশুর জীবন সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, সামাজিক বৈষম্য আর নানামুখী বাধায় তাদের শিক্ষাজীবন থমকে যায় মাঝপথে। এমন বাস্তবতায় এই শিশুদের ঝরে পড়া ঠেকাতে এগিয়ে এসেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ-তরুণী। ‘পদাতিক’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে তাঁরা চালু করেছেন সাপ্তাহিক পাঠদান কর্মসূচি ‘আমরা করব জয়’।
নগরের কীর্তনখোলা নদীতীরের চাঁনমারি এলাকায় কলোনিতে (বস্তি) এই পাঠশালার সূচনা। শতাধিক শিশুকে নিয়মিত পাঠদান করাছেন তাঁরা। এখানে শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে এই পাঠ সীমাবদ্ধ নয়, শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ও আনন্দময় করতে শেখানো হয় গান, কবিতা ও গল্প। গান, গল্প, কবিতা বলার মাধ্যমে চলে পাঠদান।
প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ‘আমরা করব জয়’ পাঠশালার এই ব্যতিক্রমী পাঠদান কার্যক্রম। শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, যা সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের হাত খরচ বাঁচিয়ে সংগ্রহ করেছেন।
পদাতিকের সভাপতি ভূমিকা সরকার প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখি একটি সমৃদ্ধ দেশের। সুনাগরিকের শান্তিময় দেশ। এ জন্য সবার আগের সব মানুষের শিক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক দৈন্য, অজ্ঞতা আমাদের শিশুদের সেই অধিকার নিশ্চিতের পথে বড় প্রতিবন্ধক। কিন্তু আমরা যারা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছি, তারা যদি যে যার জায়গা থেকে এই অন্ধকার উত্তরণে সামান্য ভূমিকা নিই, তাহলে ছোট এই উদ্যোগে দেশটা আলোয় আলোকিত হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগে আশা জেগেছে এই কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁরা অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে কঠিন জীবনসংগ্রাম করছেন। এ দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতেই দম আটকে যাওয়ার অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই শিশুদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করতে না পেরে তাদের কাজে পাঠান। এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ছে নিম্নবিত্তের এই শিশুরা।
অধিকারবঞ্চিত শিশুদের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘আমরা করব জয়’ পাঠশালায় চলছে শিশুদের পাঠদান। গত শনিবার বিকেলে তোলা