চট্টগ্রামে পুলিশ-রিকশাচালক সংঘর্ষ, আটক ৫
Published: 24th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন চালকরা। গতকাল বুধবার দুপুরে নগরের চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যালে দফায় দফায় সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অনেকে। অভিযান চালিয়ে পাঁচ রিকশাচালককে আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রামে কয়েক দিন ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। অভিযানে অন্তত তিন হাজার রিকশা জব্দ করা হয়েছে। বুধবার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় গ্যারেজে অভিযান চালানো হয়। এ সময় রিকশা জব্দের পাশাপাশি গ্যারেজের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে পুলিশ। প্রতিবাদে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মিছিল নিয়ে রিকশাচালকরা বাহির সিগন্যাল এলাকার সড়ক অবরোধ করেন।
এতে আরাকান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে প্রথমে বাগ্বিতণ্ডা, পরে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন চালকরা। বিপরীতে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়লে, টিকতে না পেরে অলিগলিতে অবস্থান নেন চালকরা। সেখান থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কয়েক দফা পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় চালকদের। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অটোরিকশার পাঁচ চালককে আটক করে। এরপর আরও কয়েকটি গ্যারেজে অভিযান চালানো হয়।
সরেজমিন সংঘর্ষের পর বাহির সিগন্যাল মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। সেখানে গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছেন না তারা। অসংখ্য ইটপাটকেল পড়ে ছিল।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন জানান, সকাল থেকে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধের কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। কালুরঘাট শিল্প এলাকায় আমদানি-রপ্তানির অনেক যান আটকা পড়ে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক ছেড়ে দিতে বললে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন।
জানতে চাইলে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয় বলেন, অভিযানের নামে পুলিশ হয়রানি-নিপীড়ন করছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কথা বলে তারা গরিব রিকশাচালকদের পেটে লাথি মারছে।
তিনি বলেন, সংঘর্ষের দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। অবিলম্বে জব্দ রিকশা ছেড়ে দেওয়া ও অভিযান বন্ধ করতে হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার, বাড়ি ফিরছেন লাখো মানুষ
রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে গতকাল বুধবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারপাশে যে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এরপরই বিভিন্ন দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া লাখো মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপের কাছে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অংশে চার মিটার (১২ ফুট) পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইকুয়েডর পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরে উঁচু স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়।
সুনামি সতর্কতা জারির পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ১২১টি বন্দরের মধ্যে ৬৫টির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপ কর্তৃপক্ষ এ দ্বীপে সব ফ্লাইটের চলাচল বাতিল করে।
তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। সুনামি দেখা গেলেও ঢেউয়ের উচ্চতা কম ছিল। পরে একের পর এক দেশ সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার করে বা হ্রাস করে এবং উপকূলবাসীদের জানিয়ে দেয় যে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন।
জাপানে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল। পরে সতর্কতা কমানো বা বাতিল করা হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় সেটি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে খালি করে ফেলা হয়েছিল। ২০১১ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও ভয়ংকর সুনামিতে কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।
সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাশিয়ায়। রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে জলোচ্ছ্বাস সেভেরো-কুরিলস্ক শহরের বন্দর প্লাবিত হয়েছে এবং স্থানীয় মাছ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পানিতে ডুবে গেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো ভিডিও ফুটেজে ভবন ও ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি৩০ জুলাই ২০২৫মেয়র আলেক্সান্ডার ওভস্যাননিকভ বলেছেন, জলোচ্ছ্বাসের পানি শহরের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পৌঁছায়, যা তটরেখা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
তবে এবারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১১ সালে হওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সামান্য। ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হন।
গতকালের ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পরই ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয় বলে জানিয়েছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুনরাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামির আঘাত৩০ জুলাই ২০২৫আঞ্চলিক ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ছিল কামচাতকা অঞ্চলে ১৯৫২ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী। সংস্থাটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রা পর্যন্ত পরাঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।এদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ১৯০০ সালের পর রেকর্ডকৃত ১০টি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের মধ্যে একটি।
এই ভূমিকম্পের পর রাশিয়ার জনবিরল দূর পূর্বাঞ্চলে একাধিক পরাঘাত অনুভূত হয়। এর একটি ছিল ৬ দশমিক ৯ মাত্রার।
ইউএসজিএস বলেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত একটি পরাঘাত ৭ মাত্রার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫৯ শতাংশ।
আরও পড়ুনশক্তিশালী ১০ ভূমিকম্পের দুটিই আঘাত হানে রাশিয়ায়, আজকেরটি কততম২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমিকম্প: সরিয়ে নেওয়া হলো ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের৩০ জুলাই ২০২৫