মাসুদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে
Published: 24th, April 2025 GMT
ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন ও পাচারের সত্যতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে বর্তমানে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৭২২ টাকা রয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাসুদ উদ্দিন ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ১৫৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬৪
টাকা লেনদেন হয়েছে। তার মধ্যে ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা ছাড়া বাকিটা সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠান ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।
অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে রিক্রুটিং, ট্রেনিং ও কনসালট্যান্সি এজেন্সি এবং মাসুদ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার জন্য আদালতে আবেদন করে সিআইডি। সোমবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জর্জ কোর্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিচালককে অভিযুক্তের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। এতে বলা হয়, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মানিলন্ডারিং আইনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ব্যাংক লেনদেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠানো হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটে ঢুকে
এই এজেন্সি একাই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে।
মাসুদ উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সিআইডির এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর সিআইডি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাবে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আত্মগোপনে যান।
এদিকে জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে সত্যতা পাওয়ায় ১২টি মামলা করে সংস্থাটি, যা তদন্তাধীন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।
গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।