ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন ও পাচারের সত্যতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে বর্তমানে ৫ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৭২২ টাকা রয়েছে। 

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাসুদ উদ্দিন ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ১৫৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬৪ 
টাকা লেনদেন হয়েছে। তার মধ্যে ৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা ছাড়া বাকিটা সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠান ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শেষে রিক্রুটিং, ট্রেনিং ও কনসালট্যান্সি এজেন্সি এবং মাসুদ উদ্দিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩৭টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার জন্য আদালতে আবেদন করে সিআইডি। সোমবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জর্জ কোর্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিচালককে অভিযুক্তের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন। এতে বলা হয়, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মানিলন্ডারিং আইনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ব্যাংক লেনদেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

সিআইডি সূত্রে জানা যায়, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠা করেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠানো হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটে ঢুকে 
এই এজেন্সি একাই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে।

মাসুদ উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সিআইডির এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। মামলা হওয়ার পর সিআইডি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাবে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী আত্মগোপনে যান।

এদিকে জনশক্তি রপ্তানির আড়ালে অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরে সত্যতা পাওয়ায় ১২টি মামলা করে সংস্থাটি, যা তদন্তাধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স আইড তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের কত পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, কোথায় সেগুলোর অবস্থান

ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন শহরে আজ শুক্রবার ভোররাতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পারমাণবিক কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ হামলার আগে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সময় ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি দ্রুত সম্প্রসারণ করছে—ক্রমবর্ধমান এই আশঙ্কার কারণেই মূলত এসব বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

২০১৫ সালে ছয় প্রভাবশালী দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে ইরানকে পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত রাখার শর্ত দেওয়া হয়। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ‍(আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইরানে মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ছিল প্রায় ৯ হাজার ২৪৭ দশমিক ৬ কেজি বা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৪৫ গুণ বেশি।

মোট মজুতকৃত ইউরেনিয়ামের মধ্যে ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে ইরান, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রযোজ্য সমৃদ্ধকরণের চেয়ে সামান্য কম। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।

ভিয়েনাভিত্তিক সংস্থা আইএইএ-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাত্ত্বিকভাবে ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম রয়েছে, আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে দেশটি প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারবে।

তবে ইরান বরাবরই এ কথা অস্বীকার করে আসছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে জানিয়েছে দেশটি।

নিচে ইরানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে:

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র

০১. নাতাঞ্জ

তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি গভীরভাবে সুরক্ষিত (বাংকারযুক্ত) একটি স্থাপনা। কেন্দ্রটির অস্তিত্ব প্রথম সামনে আসে ২০০২ সালে।

নাতাঞ্জের দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের কার্যক্রম ভূগর্ভে পরিচালিত হয়। সেন্ট্রিফিউজ হলো এমন যন্ত্র, যা ব্যবহার করে ধাপে ধাপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।

২০২১ সালের এপ্রিলে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্রে একটি হামলা হয়। এ হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।

আজ শুক্রবার ভোররাতে এই কেন্দ্রে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কেন্দ্রটির পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত পরমাণুবিজ্ঞানীদেরও নিশানা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

আইএইএ–এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিশ্চিত করেছেন, যেসব স্থান লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি নাতাঞ্জ।

মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।

ফোর্ডো

মধ্য ইরানের পবিত্র শহর কোমের কাছে একটি পাহাড়ের নিচে গোপনে নির্মিত পারমাণবিক কর্মসূচি কেন্দ্র ফোর্ডো ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এটি জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়।

প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘জরুরি’ স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হলেও পরে ইরান জানায়, এটি একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সম্ভাব্য বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য মাটির নিচে এটি নির্মাণ করা হয়। এই কেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার সেন্ট্রিফিউজ বসানো সম্ভব।

২০২৩ সালে এই কেন্দ্রে ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পাওয়া যায়। ইরানের দাবি, পরিশোধন প্রক্রিয়ায় অনিচ্ছাকৃত তারতম্যের কারণে এমনটি হয়েছে।

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু কী, কারা জড়িত, নিহত কারা ৮ ঘণ্টা আগেইরানের বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের আমানতকারীরা টাকা ফেরত চান
  • ইরানের কত পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, কোথায় সেগুলোর অবস্থান