অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতি এবং শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার কারণে বাংলাদেশে চলতি বছর নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে দারিদ্র্য পরিস্থিতির এই অবনতির আশঙ্কা করেছে বিশ্বব্যাংক। গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ
করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে পিছিয়ে পড়া মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দারিদ্র্যের জাতীয় হার বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অতিদরিদ্র মানুষের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, একজন মানুষের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৫ ডলারের কম হলে তাকে অতিদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমাজে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে আর্থসামাজিক বৈষম্য আরও বাড়বে। বৈষম্য নির্ণয় সম্পর্কিত জিনি অনুপাত ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হতে পারে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়। গত দু্ই বছর অর্থাৎ ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হওয়া এবং শ্রমবাজারের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াকে এ পরিস্থিতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। দারিদ্র্য পরিস্থিতি অবনতির অন্য আরও যেসব কারণের কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– দুর্বল ব্যবসা পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে আসা, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে এ সুযোগ সীমিত হয়ে আসা ইত্যাদি।
প্রাক্কলন যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনকে চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বিবিএসের হিসাবে, গত তিন অর্থবছরের মধ্যে ২০২২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৪ সালে এ হার দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের অনুমান, এ বছর শেষে দারিদ্র্যের হার আরও বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য পরের দুই বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমে আসবে। আগামী ২০২৬ এবং ২০২৭ সালে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২০ দশমিক ৬ এবং ১৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর শ্রমশক্তির হার ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর প্রাথমিক কারণ হিসেবে শ্রমশক্তিতে নারীর হার কমে আসাকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ হার গত বছর ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। একই সময়ে শ্রমশক্তির ২০ লাখ ৬০ হাজার মানুষ কাজের বাইরে ছিল। তাদের ২০ লাখ ১০ হাজারই নারী। অন্যদিকে কর্মংসংস্থান ৭ কোটি ১০ লাখ থেকে ৬ কোটি ৯৪ লাখে নেমে এসেছে। সব খাতেই কাজের সুযোগ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে সেবা খাতে। এ খাতে কাজ কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কৃষি খাতে কাজ কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। শিল্প খাতে এ হার শূন্য ৮ শতাংশ। এ কারণে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার।
বিশ্বব্যাংক জাতীয়ভাবে হিসাব করা দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করেছে। ২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুসারে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি বছরে তা বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর ওপর বেশি প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া শ্রমবাজার পরিস্থিতি চলতি বছর দুর্বল থাকতে পারে।
এর আগে বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এর পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। নতুন পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানোর পেছনে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তাকে অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। রাজস্ব সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার না হলে প্রবৃদ্ধির গতি আরও মন্থর হতে পারে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহসী ও লক্ষ্যভিত্তিক সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত প রব দ ধ ২ দশম ক দশম ক ৬ দর দ র
এছাড়াও পড়ুন:
তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের ঘোষণায় জানা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৬ দশমিক ৮৩ টাকা; ২০২৪ সালের একই সময় যা ছিল ৫ দশমিক ৫৫ টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে প্রায় ২৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত স্কয়ার ফার্মার মুনাফা বেড়েছে। জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির সম্মিলিত ইপিএস দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ টাকা; জুলাই ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ সময় যা ছিল ১৮ দশমিক ২৪ টাকা। এ সময় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে স্কয়ার ফার্মার শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা নগদ প্রবাহ কমেছে। এই সময় নগদ প্রবাহ ছিল ১১ টাকা ৯০ পয়সা; আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থপ্রবাহ ছিল ১৭ দশমিক ৩২ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১৫১ দশমিক ৯৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন তারিখে যা ছিল ১৪২ দশমিক শূন্য ৫ টাকা।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং নগদ প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ওই সময় দেশীয় ক্রেতাদের অতিরিক্ত ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোম্পানি বিমা দাবি পেয়েছে। সেই সব কারণ এখন আর নেই। ফলে তা কমে এসেছে।
গত অর্থবছর রেকর্ড লভ্যাংশ দিয়েছে দেশের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। গত জুনে সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় লভ্যাংশের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর স্কয়ার ফার্মা প্রকৃত মুনাফা করেছে ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ১৯৫ কোটি টাকা বা সোয়া ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৬১ পয়সায়। আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২১ টাকা ৪১ পয়সা।