আন্তর্জাতিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা নিয়ে মধ্যস্থতাকারী বিশ্বব্যাংকে কিছু জানায়নি ভারত
Published: 25th, April 2025 GMT
পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) একতরফা স্থগিত করার ভারতের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংককে (ডব্লিউবি) কিছু জানানো হয়নি। বিশ্বব্যাংক এ কথা জানিয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক এ চুক্তির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানিবণ্টন–সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বিশ্বব্যাংক।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে ভারত।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ভারত ওই চুক্তি স্থগিত করছে এবং ‘অবিলম্বে তা কার্যকর’ হবে।
পেহেলগামে হামলার পর ভারত ঘোষণা দেয়, ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর থাকা ওই চুক্তি ‘স্থগিত’ করা হবে। দৃশ্যত, এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীগুলোর (চেনাব, ঝিলম ও মূল সিন্ধু—যা ‘পশ্চিমা নদী’ নামে পরিচিত) পানিসংক্রান্ত তথ্য–ভাগাভাগি বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ সম্পর্কে তাকে অবগত করা ভারত বন্ধ রাখবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের যে পানি পাওয়ার কথা, তা তাদের দেবে না দেশটি।চিঠিতে লেখা হয়, ‘একটি চুক্তিকে ঐকান্তিক আস্থার সঙ্গে মেনে চলা একটি মৌলিক বাধ্যবাধকতার বিষয়। কিন্তু এর বদলে আমরা দেখছি, পাকিস্তান থেকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে সীমান্ত–সন্ত্রাস পরিচালনা করা হচ্ছে।’
ভারতের এক সরকারি সূত্র দ্য হিন্দুকে বলেছে, ‘চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংককে জানানোর “কোনো প্রয়োজন” নেই।’
বিশ্বব্যাংকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চুক্তি নিয়ে সদস্যদেশগুলোর সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে তাঁরা কোনো মতামত দেননি।
আরও পড়ুনসিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করল ভারত, পাল্টা কী করবে পাকিস্তান২৪ এপ্রিল ২০২৫পেহেলগামে হামলার পর গত বুধবার ভারত ঘোষণা দেয়, ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর থাকা ওই চুক্তি ‘স্থগিত’ করা হবে। দৃশ্যত, এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীগুলোর (চেনাব, ঝিলম ও মূল সিন্ধু—যা ‘পশ্চিমা নদী’ নামে পরিচিত) পানিসংক্রান্ত তথ্য–ভাগাভাগি বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ সম্পর্কে তাকে অবগত করা বন্ধ রাখবে ভারত।
‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, যদি ভারত সিন্ধু নদীর পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তবে তাকে পুরোপুরি আইডব্লিউটি চুক্তি উপেক্ষা করতে হবে। চুক্তির বর্তমান শর্তে তা সম্ভব নয়।এ ছাড়া চুক্তি স্থগিত করার অর্থ, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের যে পানি পাওয়ার কথা, ভারত তা তাদের দেবে না।
পেহেলগামের ঘটনার আগে ২০২২ সাল থেকে ‘পার্মানেন্ট সিন্ধু কমিশন’–এর বৈঠক ডাকা হয়নি। কমিশনের অধীন ভারত ও পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞ দল সিন্ধু অববাহিকার পানি–ভাগাভাগি নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা সমাধানের চেষ্টা করে থাকে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে হামলা: ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি৬ ঘণ্টা আগেচুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমের নদী সিন্ধু, ঝিলম, চেনাবে উল্লেখযোগ্য জলাধার নির্মাণ করতে পারবে না এবং পানি অবশ্যই নির্ধারিত স্তরে রাখবে, যেন ভাটিতে বন্যা বা পাকিস্তানের কৃষিকাজে কোনো ক্ষতি না হয়।
যদিও পাকিস্তান একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে অভিন্ন নদীগুলোর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো বদলানোর অভিযোগ করেছে। যদিও ভারত বলেছে, প্রকল্পগুলো কার্যকর রাখতেই এগুলো করা হয়েছে।
‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’–এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘যদি ভারত সিন্ধু নদীর পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তবে তাকে পুরোপুরি আইডব্লিউটি চুক্তি উপেক্ষা করতে হবে। চুক্তির বর্তমান শর্তে তা সম্ভব নয়।’
পেহেলগাম হামলার পর কয়েকটি সূত্র দ্য হিন্দুকে জানিয়েছে, এখন ওই চুক্তির আওতায় ভারত এমন কিছু বিকল্পের কথা বিবেচনা করছে, যা আগে কখনো ভাবেনি।
আরও পড়ুনভারত একতরফাভাবে পানি চুক্তি বাতিল করতে পারে না: পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিকদের হুঁশিয়ারি৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হুমকির মুখে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীরা, উত্তরাখন্ডে হিন্দু নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই চ ক ত প রকল প ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।