জমি দখলের প্রতিবাদ করায় মামলা-হয়রানি
Published: 25th, April 2025 GMT
কালিয়াকৈরের বাহেরচালা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান। কয়েক বছর ধরে তাঁর গ্রামের লোকজন অভিযোগ করছে, ভেনিস অব বেঙ্গল প্রোপার্টিজের স্বপ্নপুরী আবাসন প্রকল্পের নামে তাদের জমি দখল করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করেন আব্দুর রহমানও। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে কালিয়াকৈর থানায় চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়। গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আব্দুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার পাঁচ শতাধিক গ্রামবাসী মৌচাক-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সেখানে বক্তব্য দিতে এসে এসব কথা বলেন আব্দুর রহমান।
অন্য বক্তারা অভিযোগ করেন, ভেনিস অব বেঙ্গল প্রোপার্টিজের মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাহেরচালার এক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক
শতাংশ জমি কিনে দখলে নেন। পরে ওই জমির আশপাশের জমি অল্প দামে কেনার পাঁয়তারা
শুরু করে কোম্পানিটি। এতে ব্যর্থ হয়ে জোর
করে পছন্দের জমি দখল করে নেয়। এর প্রতিবাদ করা হলে একজনের নামে দুটি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে।
বক্তব্য দিতে গিয়ে ভুক্তভোগী মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, ভেনিস অব বেঙ্গল প্রোপার্টিজের লোকজন জোর করে খাইলসাজানি মৌজার ১১০ শতাংশ জমি দখল করে মাটি ভরাট করেছে। এর প্রতিবাদ করায় গত মার্চে কালিয়াকৈর থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছে। এতে তাঁকে আসামি করা হয়। তারা ওই কোম্পানির লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
শুক্রবারের মানববন্ধনে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দখল করা জমি ফেরতের দাবি জানানো হয়। এ সময় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ আঞ্চলিক সড়কটি ঘণ্টাখানেক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে যানজট দেখা দেয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন তোফাজ্জল হোসেন, তাহের আলী, নুসরাত জাহান, হাজী আব্দুর রহিম প্রমুখ। বাহেরচালার বাসিন্দা আলমাছ মিয়া বলেন, তিনি পেশায় কৃষক। কোম্পানিটি তাঁরসহ অংশীদারদের প্রায় ১৬০ শতাংশ জমি নিয়ে গেছে। আলমাছের ভাষ্য, ‘দাম চাইতে গেলে মারতে আসে। তারা টাকাও দেয় না, জমিতে ফসল চাষ করতেও দেয় না। আমরা গরিব কৃষক, কী করব বুঝতে পারছি না।’
জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন স্বপ্নপুরী আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ। তাঁর দাবি, ‘আমরা কারও জমি দখল করি নাই। আমাদের দখলে যে জমি রয়েছে, তা গ্রামবাসীর কাছ থেকে কেনা। গ্রামবাসীর নামে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন কোম্পানির মালিক, তা আমার অজ্ঞাতসারে করেছেন। আমি মামলা-হামলার পক্ষে নই।’
কালিয়াকৈর থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রিজভীর ভাইকে কুপিয়ে জখম, গ্রেপ্তার ৩
নোয়াখালী জেলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই স্কুলছাত্র শাহরিয়ার হাসান রিমনকে (১৬) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে আহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতে সুধারাম মডেল থানায় রিমনের মা বাদী হয়ে দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
আহত শাহরিয়ার হাসান রিমন জেলা শহরের বসুন্ধরা কলোনি বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন ও ফরিদা ইয়াছমিন দম্পত্তির ছেলে। সে স্থানীয় হরিনারায়ণপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনি, কারাগারে ইমামের মৃত্যু
বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শাহরিয়ার হাসান রিমনকে ধারালো ছুরি এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় রাতে আহত রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন ২১ জনকে এজহারভুক্ত ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
রিমনের মা ফরিদা ইয়াছমিন জানান, রিমনের পিঠে, মাথায়সহ মোট ছয়টি ছুরির আঘাত করা হয়। তার অপারেশন ঢাকা মেডিকেল কলেজে করানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা চলছে। তার পিঠের আঘাতগুলো ফুসফুস পর্যন্ত চলে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, হামলাকারীরা ভেবেছিল রিমন মারা গেছে। যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, তখন তারা ফের হামলা করতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রিমনের অপরাধ দুই দল কিশোরের মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব মিমাংসা করে দেওয়া। একপক্ষ মানলেও অপরপক্ষ মিমাংসার বিষয়টি মন থেকে মানতে পারেনি। তারাই আমার ছেলের উপর হামলা করেছে।
রিমনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, রিমনকে ধারালো ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি আঘাত করা হয়েছে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমনের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
ঢাকায় রিমনের সঙ্গে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদা সুলতানা ইতু জানান, রাতেই রিমনের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। এরপর তার অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, রিমনের পিঠের আঘাতগুলো গুরুতর। ছুরির আঘাত প্রায় ফুসফুস পর্যন্ত চলে এসেছে। তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে জেলা শহরের বার্লিংটন মোড়ে একদল কিশোর রিমনকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বার্লিংটন এলাকাটি কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া। এই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা যাতায়াত করে। প্রতিদিন তাদের উত্ত্যক্ত করা হয়। কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। প্রশাসনেরও নজরদারি নেই।
এদিকে, রিমনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করার প্রতিবাদে তার স্কুলের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলের সামনে প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে রিমনের স্কুলের শিক্ষার্থী ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী, স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে রিমনের উপর যারা হামলা করেছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এজহারভুক্ত একজনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় আমাদের আরো অনুসন্ধান চলছে। সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের খুব দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
ঢাকা/সুজন/বকুল