ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
Published: 29th, April 2025 GMT
ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে, যার মধ্যে আফ্রিকান অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত একটি আটক কেন্দ্রও রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণঘাতী বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। খবর প্রেস টিভির।
গতকাল সোমবার ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশে আফ্রিকান অভিবাসীদের জন্য নির্ধারিত একটি আটক কেন্দ্র লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলায় প্রায় ৭০ জন বন্দী নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অবস্থা গুরুতর।
এছাড়া একই দিনে ইয়েমেনের রাজধানী সানার উত্তরাঞ্চলের বানি আল-হারিথ জেলার থাকবান এলাকায় মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ইয়েমেনে কারাগারে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা, নিহত ৬৮
ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত ৮
সোমবার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক বিবৃতিতে বলেন, “ইয়েমেনের বিভিন্ন অংশে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং মানুষের বাড়িঘরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর অব্যাহত হামলা, যার ফলে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, তা ‘যুদ্ধাপরাধ’।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ‘এই সুস্পষ্ট আইন লঙ্ঘন এবং ইয়েমেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ঘন ঘন লঙ্ঘনের প্রতি নীরব এবং উদাসীন’ ভূমিকার জন্য সমালোচনা করেছেন।
ইরানের মুখপাত্র আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যামূলক যুদ্ধ এবং লেবাননের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।
বাঘাই বলেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক আগ্রাসন ইসরায়েলি সরকারের ‘মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস ও দুর্বল করার এবং পুরো পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দেওয়ার’ দুষ্ট পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ইয়েমেনের মুসলিম জনগণের হত্যা বন্ধে এবং গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ অব্যাহত রাখা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাঘাই ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)