৩০ এপ্রিল ১৯৪৫। সোভিয়েত রেড আর্মির সৈন্যরা জার্মানির বার্লিন ঘিরে ফেলেছে। ক্রমেই এগিয়ে আসছে হিটলারের বাংকারের দিকে। সেই সময় অ্যাডলফ হিটলার তাঁর শেষ আশ্রয়স্থল, নতুন তৈরি চ্যান্সেলর ভবনের পাশের বাংকারে আত্মহত্যা করেন। ওই দিনের ঘটনাগুলো ঐতিহাসিকভাবে নথিভুক্ত থাকলেও বছরের পর বছর ধরে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে অনেক মিথ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, হিটলার যুদ্ধের পরে বেঁচে ছিলেন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ অ্যান্টার্কটিকায় তাঁর গোপন ঘাঁটির কথা বলেছিলেন।

হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন হামবুর্গ এপেনডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড.

ক্লাউস পুশেল। তিনি গত ২০ মার্চ তাঁর সদ্য প্রকাশিত নতুন বই ‘দ্য টোড গেট উবের লাইশেন’ বা ‘মৃত্যুর পথে লাশ পড়ে থাকে’তে লিখেছেন হিটলারের মৃত্যুর না জানা অনেক কথা।

পুশেল লিখেছেন, ‘সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে দিয়ে কামড়ে ভেঙে খাওয়া এবং এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথায় গুলি করে যৌথ প্রক্রিয়ায় আত্মহত্যাই ছিল আ্যাডলফ হিটলারের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ। হিটলার ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে তাঁর বাংকারে আত্মহত্যা করেন। তার কিছু পরেই সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনে হিটলারের বাংকারে এসে উপস্থিত হয়।

হামবুর্গ ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক মেডিসিনের সাবেক প্রধান ক্লাউস পুশেল ১৯৯০ সালে মস্কোর সামরিক মহাফেজখানায় রক্ষিত মাথার খুলি ও অ্যাডলফ হিটলারের দেহের রাশিয়ান ময়নাতদন্তের ফলাফল পরিদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটিতে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে আডলফ হিটলারের মৃত্যরহস্য বিশ্লেষণ করেছেন। অ্যাডলফ হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর হামবুর্গের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিটলারের মৃত্যু নিয়ে নানা মিথ ভেঙে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘যুদ্ধের শেষে হিটলারের মৃত্যুকে ঘিরে কয়েক দশক ধরে অনেক মিথ ছড়িয়েছিল, যেগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ড. পুশেলের মতে, হিটলারের দাঁতের পরীক্ষার ফলাফল স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায় যে মৃতদেহটি অ্যাডলফ হিটলারের।

পুশেলে বলেন, ‘আমার ধারণা হলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত বার্লিনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি হলেও হিটলারের বাংকার থেকে প্রাপ্ত মৃতদেহগুলোর পরীক্ষা বেশ যত্নসহকারে এবং বোধগম্যভাবে সম্পন্ন করে নথিভুক্ত করা হয়েছিল।’

তবে পুশেলের কৌতূহলোদ্দীপক নিরীক্ষায় যে বিষয়গুলো নতুন করে এসেছে এর একটি হলো, হিটলারের একটি অণ্ডকোষ ছিল না। এই আবিষ্কারের দুটি ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। আর তা হলো, ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার আঘাতের কারণে অণ্ডকোষ বা ক্রিটোকিডিজম হারান। পরে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে তিনি যখন আটক ছিলেন, তখন কারাগারের একজন মেডিকেল অফিসার হিটলারের বাঁ অণ্ডকোষ না থাকার বিষয়টি নির্ণয় করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯২৩ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর হিটলারকে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চিকিৎসকেরা হিটলারের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর বর্ণনা দেননি। শুধু শরীরের উপরিভাগের বিস্তারিত বিবরণ দেন। হিটলারের খুলি এবং শরীরে একধরনের গন্ধের কারণ সম্পর্কে ক্লাউস পুশেল বলেছেন, এটি ছিল পটাশিয়াম সায়ানাইডের মাধ্যমে বিষক্রিয়ার ইঙ্গিত।

এ ছাড়া হিটলারের মুখগহ্বরে কাচের টুকরা পাওয়া যায়। তা এটিই স্পষ্ট করে যে তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইডের অ্যাম্পুল কামড়ে ছিলেন। এই পটাশিয়াম সায়ানাইডই কি প্রাণঘাতী ছিল নাকি হিটলার খুব দ্রুত নিজের মাথায় গুলি করে মারা গিয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। মাথার খুলির আঘাতের ওপর ভিত্তি করে ড. পুশেল অনুমান করেন যে হিটলার মাথার ডান দিকে ৭.৬৫ মিমি ক্যালিবারের ভালথার পিস্তল দিয়ে নিজেকে গুলি করেছিলেন। সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে কামড় দিয়ে চিবিয়ে খোলার পর পর্যন্ত তাঁর হাতে দুই মিনিট পর্যন্ত সময় ছিল। সেই সময় তিনি তাঁর মাথায় গুলি করেন।

পুশেলের মতে, আত্মহননকে বা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য হিটলার একই সঙ্গে দুটি প্রাণঘাতী পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

হিটলার তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর মৃতদেহটি যেন রাইখ চ্যান্সেলারির বাগানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু এই দাহপ্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সোভিয়েত রেড আর্মি এসে হাজির হয়।

সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে হিটলারের দেহাবশেষ সংরক্ষণ করেছিল। বেশ কয়েকবার কবর দেওয়া হয়েছিল এবং কবর থেকে তোলা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৫ এপ্রিল কেজিবি প্রধান ইউরি আন্দ্রোপভ এবং সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা লিওনিড ব্রেজনেভ সাবেক পূর্ব জার্মানির ম্যাগডেবার্গ শহরের সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস সদর দপ্তরের একটি বাগানে মৃতদেহটি মাটিচাপা দিয়ে রাখার নির্দেশ দেন।

১৯৯১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে ম্যাগডেবার্গ শহরের সোভিয়েত সিক্রেট সার্ভিস সদর দপ্তরটি বন্ধ করে দেওয়ার আগে মাটি চাপা দিয়ে রাখা দেহাবশেষ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তবে শুধু হিটলারের খুলিটি মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া দেহাবশেষের ছাইগুলো শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এলবে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই অবশেষে ধ্বংস হয়ে যায় অ্যাডলফ হিটলারের মৃতদেহ।

ক্লাউস পুশেল ও সাংবাদিক বেটিনা মিটেলাখার যৌথভাবে বইটি প্রকাশ করেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ