পটুয়াখালীতে গানের আয়োজনে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে অতিথি ওসি
Published: 3rd, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নৈশভোজ ও গানের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমারত হোসেনের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
১ মে রাত ১১টার দিকে উপজেলার সদরের বাহেরচর বাজারের একটি আবাসিক ভবনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি সভাকক্ষে বসে গান পরিবেশন করছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামাল মীর। আর তাঁর পাশে গিটার হাতে বসে আছেন উপজেলা সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাঁধন তালুকদার। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের উপদপ্তর সম্পাদক রবিন আহমেদ, উপজেলার ছাত্রলীগের সহসভাপতি বনি আমিনসহ কয়েকজন। এ সময় অতিথির আসনে বসে এমারত হোসেন গান শোনার পাশাপাশি মুঠোফোন ব্যবহার করছিলেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাথা নাড়িয়ে গানের সুরে তাল মেলানোর চেষ্টা করছিলেন।
অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি মামলার দুজন আসামিও আছেন। তাঁরা হলেন কামাল মীর ও বনি আমিন। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালী থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন উপজেলার চরমন্তাজ ইউনিয়নের বশির ফকির নামের এক ব্যক্তি। এতে প্রধান আসামি করা হয় রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান খান মামুনকে। মামলায় এজাহারভুক্ত ১৬৮ আসামির মধ্যে ৪৫ নম্বরে কামাল মীর এবং ১৫৫ নম্বরে বনি আমিনের নাম আছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ওসি এমরাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘কে ছাত্রলীগ করে, সব তো আর আমি চিনি না। মামলার আসামি ছাত্রলীগের এক নেতা ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন, কিন্তু তিনি জামিনে আছেন। ওখানে আমি ছাড়াও উপজেলার অনেক অফিসার (কর্মকর্তা) গেছেন।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ বলেন, ‘কলাপাড়া সার্কেল এসপিকে খোঁজখবর নিতে বলেছি। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’