এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু। আমাদের কাছে পেলে নামেই পরিচিত। তিনি ব্রাজিলের ‘কালো মানিক’খ্যাত ফুটবল বিস্ময়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

না, আমার মধ্যে কোনো অতিমানবিক ক্ষমতা ছিল না। যা ছিল, তার সবই সাধারণ। শক্তি জোগায়– এমন কিছুর প্রতি আস্থা রাখতে হয়েছিল; করতে হয়েছিল কিছু জিনিসের ওপর বিশ্বাস স্থাপন; তবে ক্যারিয়ারে এমন অনেক মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছি; যেগুলো স্রেফ ঈশ্বরের দেওয়া উপহারের ফল হিসেবে ধরে নিতে পারিনি। যেমন– আমরা একবার আফ্রিকার নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে চলতে থাকা যুদ্ধ গিয়েছিল থেমে; কেননা, লোকজন যাবে পেলের খেলা দেখতে, এজন্য তারা যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে। খেলা শেষ হয়ে যেতে আবার জড়িয়ে পড়েছিল যুদ্ধে; ভাবা যায়!
বাবাকে দেওয়া কথা
প্রথম যে বিশ্বকাপের স্মৃতি মনে করতে পারি, সেটি ১৯৫০ সালের। আমার বয়স তখন ৯-১০ বছর। বাবা ফুটবল খেলতেন। বড় একটা পার্টি দিয়েছিলেন তারা। ব্রাজিল যখন উরুগুয়ের কাছে হেরে গেল, বাবাকে কাঁদতে দেখেছি। আমি ছিলাম বাচ্চা-কাচ্চাদের সঙ্গে। বললাম, ‘বাবা, কাঁদছ কেন?’ বললেন, ‘বিশ্বকাপটা হারিয়ে ফেলল ব্রাজিল।’ শুনে আমি ইয়ার্কি করে বললাম, ‘কেঁদ না, আমি তোমাকে বিশ্বকাপ এনে দেব।’ এর আট বছর পর, ব্রাজিল যখন সুইডেনে অনুষ্ঠিত ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করল, আমিও ছিলাম সেই দলের খেলোয়াড়। এ ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করা কঠিন। জানি না কেন আমি সেই দলে ছিলাম; স্রেফ জানি, দলে জায়গা পেয়ে বিশ্বকাপ জিতেছি। বয়স তখন সতেরো বছর। 
বদলানো সময় এবং সবচেয়ে বড় খেলা
খেলা সবসময় খেলাই ছিল। তবে টাকা উপার্জনের জন্য আমাদের সারা বছর ঘুরে বেড়াতে হতো। এখনকার খেলোয়াড়দের তো স্পন্সর আছে; তাদের এভাবে ঘুরে বেড়ানোরও দরকার পড়ে না। আমাদের সময়ে, আমরা পৃথিবীজুড়ে ফুটবল খেলে বেড়াতাম। সময় এখন পাল্টেছে। হয়তো এটিই আমাকে তরুণদের কাছে একটি উদাহরণ করে তুলেছে। মরে গেলেও আমি খুশি থাকব; কেননা, আমি আমার সেরা চেষ্টাটাই করে গেছি। আমার খেলা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে; কেননা, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খেলা।
বাবার উপদেশ
ছোটবেলায় অন্য শিশুদের চেয়ে ভালো খেলতাম বলে ওদের খুব হেয় করতাম। একদিন বাবা বললেন, ‘শোনো। ঈশ্বর তোমাকে ফুটবল খেলার বিশেষ গুণ দিয়েছেন বলে বাচ্চাদের সঙ্গে এমন করো না। তুমি আসলে কিছুই না। এ স্রেফ ঈশ্বরের একটা উপহার। ফলে অন্যদের সম্মান করতে শেখো; কেননা, একজন ভালো মানুষ হওয়া এবং ভালো ব্যক্তিত্ব নিজের মধ্যে গড়ে তোলাই গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানেই জীবনের সার্থকতা।’
পরিশ্রম এনে দেয় সফলতা
ভালো ফুটবলার হয়ে ওঠার নেপথ্যে নিঃসন্দেহে পরিশ্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার বাবা ঠিক এ কথাটি বোঝাতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ ঈশ্বর তোমাকে ফুটবল খেলার সহজাত প্রতিভা দিয়েছেন ঠিকই, তবে এটিকে ফলপ্রসূ করে তোলার জন্য তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে; মানুষকে সম্মান করতে হবে। ফলে কঠোর অনুশীলন করতে অভ্যস্ত হই আমি। ট্রেনিং শেষে অন্য খেলোয়াড়রা যখন সৈকতে ঘুরে বেড়াত, আমি তখন সেখানে গিয়েও অবিরাম কিক 
মেরে যেতাম ফুটবলে। আরেকটি কথা, যদি আমি ভালো ফুটবলার হয়েও থাকি, যদি ঈশ্বর-প্রদত্ত উপহার পেয়েও থাকি, তবু 
মাঠে বল নিয়ে ছুটে চলা কিংবা শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা আমাকেই 
করতে হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল ফ টবল খ ল ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীতে ভারী বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে সিলোনিয়ার পানি, বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই মুহুরী

ফেনীতে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। লোকালয়ে প্রবেশ করছে সিলোনিয়া নদীর পানি। এর ফলে ফেনীর দুই উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজীর নদীতীরবর্তী বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে সর্বোচ্চ ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস। এর ফলে বেড়েছে জেলার সব নদ-নদী ও জলাশয়ের পানি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি ১১ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর) ওয়াসিম আকরাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী নদীতে পানি হু হু করে বাড়ছে। এই নদীতে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। এর ফলে প্রায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই নদীর পানি। মুহুরী নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ফুলগাজী উপজেলার লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

ফুলগাজীর বাসিন্দা শাহাব উদ্দিন জানান, ফুলগাজী বাজারে সন্ধ্যায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টি বন্ধ থাকায় পানি নেমে যেতে পারে। আবার ভারী বর্ষণ শুরু হলে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে সিলোনিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সুবার বাজারের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ এবং মনিপুর গ্রামের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তিনটি নদীর বেড়িবাঁধের ৫২টি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হলেও অধিকাংশ বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তবে বেড়িবাঁধের ১০-১২টি স্থান এখনো মেরামত করা হয়নি। এসব স্থান দিয়ে জনপদে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। নদীতে পানি বাড়ায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, নদীতে পানি বাড়লেও নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ