ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে তাদের মায়েদের ‘নাকে খত’ দিয়ে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম দেলোয়ার হোসেন দেলু। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তবে, অভিযোগ নাকচ করেছেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। এদিকে, এ ঘটনার পরে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তার সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে সালিশ বৈঠকে এই ঘটনা ঘটে। এতে সভাপতিত্ব করেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। সালিশ বৈঠকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দেলোয়ার হোসেন দেলু লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এবং দুই কিশোরের মা নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইছেন। ভিডিওর অন্য অংশে দেখা যায়, কিশোরদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ দিন আগে মাথিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি থেকে হাঁস ও কবুতর চুরি হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় দুই কিশোরকে সন্দেহ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। সেই সালিশে দুই কিশোরের সঙ্গে তাদের মায়েদেরও ডাকা হয়। পরে অভিযুক্ত কিশোরদের মারধর ও তাদের মায়েদের বলা হয়, সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারার দায়ে তাদের জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে।

অভিযুক্ত এক কিশোরের মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে যদি ভুল করে থাকে, তার বিচার হতে পারে। কিন্তু, আমাকে সবার সামনে এভাবে অপমান করা হবে, তা কল্পনাও করিনি।’’

আরেক কিশোরের মা বলেন, ‘‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। শুধু একজন মা হওয়ার কারণে আমাকে এত বড় অপমান সহ্য করতে হলো।’’

অভিযোগের বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ‘‘আমি কাউকে মারিনি। অভিযুক্ত কিশোরদের মায়েরা আমাদের কাছে আবদার করেছিলেন—বিষয়টি যেন সামাজিকভাবে মীমাংসা করা হয়। তারাই স্বেচ্ছায় নাকে খত দিয়েছেন।’’

এ বিষয়ে ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরীন কান্তা বলেন, ‘‘নারীকে এভাবে হেনস্তা করার অধিকার কারো নেই। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো.

আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে সেটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘‘সালিশ বৈঠকে নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণের অভিযোগে দেলোয়ার হোসেন দেলুর সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ঘিরে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে রাকিব নামে একজন লিখেছেন, ‘‘ছেলের দোষে মা কখনো দোষী হতে পারে না। ছেলের শাস্তি মা পেতে পারে না।’’

শাহাদাত সাগর নামে একজন লিখেন, ‘‘গ্রাম্য সালিশের নামে একজন নিরপরাধ মাকে জনসম্মুখে নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’

রিয়াজ উদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শুধুমাত্র দেলু চেয়ারম্যান নয়, সালিশে আরো কিছু মানুষরূপী জানোয়ার ছিল; তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।’’

ঢাকা/সাহাব/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে তিন বছর পর করোনায় একজনের মৃত্যু

যশোরে তিন বছর পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মৃত ব্যক্তির নাম শেখ আমির হোসেন। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামের শেখ মকছেদ আলীর ছেলে।

এ সম্পর্কে ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক বলেন, যশোরে দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এ জেলায় ২০২২ সালের মাঝামাঝি করোনায় মৃত্যু হয়েছিল। প্রায় তিন বছর পর আবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষার কোনো কিট নেই। ফলে এই হাসপাতালে কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে না। জেলায় র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরটিপিসিআর ল্যাব নতুনভাবে চালু করা হয়নি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে কিট না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সাফায়েত বলেন, ‘কয়েক বছর আগের করোনা পরীক্ষার কিছু কিট রয়েছে, যা মেয়াদোত্তীর্ণ। কিটের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে এই হাসপাতালের জন্য দুই হাজার কিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। দুই–এক দিনের মধ্যে তা হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুন পেটের ব্যথা নিয়ে আমির হোসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

হোসাইন সাফায়েত বলেন, ‘পিত্তথলিতে পাথর নিয়ে এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। পেটের ব্যথা তীব্র হতে থাকে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। তখন বাইরের একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষা করানো হলে ফল পজেটিভ আসে। এরপর তিনি মারা যান।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে বর্তমানে এক নারী করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে তিনটি কেবিন প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। যেখানে ছয় রোগী একসঙ্গে থাকতে পারবেন।
হোসাইন সাফায়েত আরও বলেন, এ বছর এখনো করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দুই থেকে একজন। যে কারণে তিনটি কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী করোনা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, কিটের ঘাটতিতে পরীক্ষা বন্ধ
  • হলুদের সাপ্লিমেন্ট খেলে কি লিভারের ক্ষতি হয়
  • বিদেশ থেকে ফেরার সময় বিনা শুল্কে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফ্রিজ-টিভিসহ ১৯টি পণ্য আনতে পারবেন
  • ইরানিরা নিজের বাড়ির ছবি শেয়ার করছেন
  • ডি ব্রুইনা চলে যাওয়ায় ম্যানচেস্টার সিটির নতুন অধিনায়ক কে হলেন
  • অস্কার পাচ্ছেন টম ক্রুজ
  • মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার মিরপুরে গুলি ছুড়ে টাকা ছিনতাইয়ে জড়িতরা
  • যশোরে করোনায় একজনের মৃত্যু
  • সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম, ফিল্ম পলিটিক্স নিয়ে শিরিন শিলা
  • যশোরে তিন বছর পর করোনায় একজনের মৃত্যু