স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন,  নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফর্মালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রেণিকক্ষে ফিল্ম: একটি শক্তিশালী শিখন মাধ্যম

আদিকালের জগ এবং মগতত্ত্ব অনুশীলনের অবসান হলেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে পাঠ্যবই ও মুখস্থনির্ভর, সেই সঙ্গে পরীক্ষামুখী। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে শিক্ষা শুধু পঠন-পাঠন নয়; বরং অনুভব, বিশ্লেষণ, নৈতিকতা ও জীবনদক্ষতা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠছে। এই পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন শিখন কৌশল অনুসন্ধানের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, যার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে ফিল্ম বা চলচ্চিত্র। ফিল্ম তার অন্তর্নিহিত ন্যারেটিভ কাঠামো, ভিজুয়াল উপস্থাপন এবং আবেগপূর্ণ অনুষঙ্গের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান, মানসিকতা ও সহানুভূতির বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। 

চলচ্চিত্র একটি বহুমাত্রিক মাধ্যম, যা শ্রবণ ও দৃষ্টির সমন্বয়ে শিক্ষার্থীর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, ভাষা ও পরিবেশ শিক্ষা, এমনকি গণিত ও বিজ্ঞানের কিছু জটিল ধারণাকেও সিনেমার মাধ্যমে উপস্থাপন করলে শিক্ষার্থীরা সহজে অনুধাবন করতে পারে। কানাডীয় আমেরিকান মনস্তত্ত্ববিদ অ্যালবার্ট বান্দুরার সামাজিক শিখনতত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ পর্যবেক্ষণ, অনুকরণ ও মডেলিংয়ের মাধ্যমে শেখে। ফিল্ম সেই পর্যবেক্ষণের বাস্তব উদাহরণ দেয়।
চলচ্চিত্র শুধু বিনোদন বা অবসরের খোরাক নয়, বরং এটি শক্তিশালী ‘মাল্টি সেন্সরি’ শিখন মাধ্যম। আবার আমেরিকান শিক্ষাবিদ এডগার ডেইলের অভিমত, মানুষ যা কেবল পড়ে তার ১০ শতাংশ মনে রাখে। কিন্তু যা দেখে ও শোনে তা প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মনে রাখে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে সিনেমা অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীর শেখার ক্ষমতা অর্জিত হয় বহু গুণ।

সব শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা এক রকম নয়। কেউ ভিজুয়াল, কেউ ভাষানির্ভর, কেউবা আন্তঃব্যক্তিক বা অন্তর্ব্যক্তিক। সিনেমা এই বহুবিধ বুদ্ধিমত্তাকে একসঙ্গে উদ্দীপিত করে। সামাজিক শিখনতাত্ত্বিকরা মনে করেন, যেহেতু কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আশপাশের পরিবেশ থেকে, একে অন্যকে দেখে ও অনুকরণ করে শিখে, তাই চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো যখন সাহস, সততা বা সহানুভূতি প্রদর্শন করে, শিক্ষার্থীরাও এসব গুণ আত্মস্থ করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা একা যা পারে না, তা সহায়তা পেলে করতে পারে। সিনেমা দেখার পর দলগত আলোচনা বা নির্দেশিত কার্যকলাপ তাদের চিন্তা ও উপলব্ধির পরিসর বৃদ্ধি করে। তবে শ্রেণিকক্ষ যেহেতু প্রেক্ষাগৃহ নয়, তাই ফিল্ম শুধু চালিয়ে দেখানো যথেষ্ট নয়। এটি হতে হবে শিখন উদ্দেশ্যভিত্তিক ও কাঠামোবদ্ধ। কার্যকরভাবে সিনেমা ব্যবহার করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রথম ধাপ অর্থাৎ প্রদর্শনীর আগে প্রাক-দর্শন কার্যক্রমে শিক্ষক কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলতে পারেন। যেমন ‘আজকের পাঠের শিখন উদ্দেশ্যের সঙ্গে ফিল্মের চরিত্রের সম্পর্ক কী? এই চরিত্র কীভাবে সমস্যা সমাধান করবে বলে তুমি মনে কর?’ অথবা ‘তুমি কী ধরনের পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পার?’ যা শিক্ষার্থীদের কৌতূহল ও মনোযোগ বৃদ্ধি করবে। দ্বিতীয় ধাপে দর্শনকালীন নির্দেশনা পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোনিবেশ করাতে, যেমন চরিত্রটি কীভাবে পরিবর্তিত হলো, কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, কেন ঘটল, এ ঘটনা কোন সামাজিক সমস্যার দিকনির্দেশ করে– এমন ফোকাস প্রশ্ন দিয়ে সিনেমা দেখার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। সব শেষ ধাপে অর্থাৎ প্রদর্শন-পরবর্তী কার্যক্রম/কৌশলের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের সিনেমা দেখে নিজের মতামত প্রকাশের জন্য যা তারা বুঝল তা লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। পাঠসংশ্লিষ্ট ফিল্মের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক বা ভূমিকা অভিনয় করতে বলা যেতে পারে। এ ছাড়াও প্রকল্পভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে সিনেমার বিষয়ে একটি গবেষণামূলক পোস্টার, রিভিউ আর্টিকেল বা ভিডিও তৈরি করতে দেওয়া যেতে পারে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থী শিখন উদ্দেশ্য অর্জনে যেমন সক্ষম হবে তেমনি ডিজিটাল দক্ষতা, সৃজনশীল দক্ষতা, সমস্যা সমাধান দক্ষতাসহ অন্যান্য সফটস্কিল উন্নয়ন করতে পারবে। 

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বস্তরের শ্রেণিকক্ষে বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো, শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহের অভাব ও শেখার একঘেয়েমি। এমন পরিস্থিতিতে ফিল্ম হতে পারে একটি গেম চেঞ্জার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নৈতিকতা বা ইতিহাসভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন শিশুদের শেখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ‘মীনা’, ‘আর ইউ লিসনিং’, ‘সংযোগ’ বা ‘বন্ধু’ সিরিজের মতো উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত। উচ্চশিক্ষায় গবেষণাধর্মী ডকুমেন্টারি ও সমাজ-সংবেদনশীল নাট্য-চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তন, নৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে কার্যকর। একইভাবে জাতীয় পাঠ্যসূচির বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করলে তা শিক্ষার্থীদের শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারে। 

যদিও শিক্ষায় সিনেমা একটি শক্তিশালী মাধ্যম, তবে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন উপযুক্ত কনটেন্টের অভাব, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা। তবে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করলে সিনেমা শিক্ষাক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পথ খুলে দিতে পারে। সম্ভাবনার কথা, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন মোবাইল ফোন, ট্যাব, স্মার্টবোর্ড এমনকি ইউটিউব বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও শিক্ষামূলক সিনেমা সহজলভ্য। ফলে শহর, গ্রাম সবখানে এ উদ্যোগ সম্ভব। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্থানীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতানির্ভর শিক্ষায়তন গড়ে তুলতে পারে। তবে শক্তিশালী এই শিখন মাধ্যমের পরিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্য, শ্রেণিকক্ষ কৌশল ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না আনলে এর প্রভাব সীমিতই থাকবে। তাই শিখন উদ্দেশ্যভিত্তিক ফিল্ম বা চলচ্চিত্রকে পাঠ্যক্রমের সাংগঠনিক অংশ এবং শ্রেণিকক্ষে সহযোগী শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ভাবার এখনই উপযুক্ত সময়।

শারীফ অনির্বাণ: স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক, দোকুজ এয়লুল ইউনিভার্সিটি, ইজমির, তুরস্ক
sharifulislam@primeuniversity.edu.bd
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ