মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র টমাস পিগট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সব মানুষের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করাকে সমর্থন করে। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তাঁরা অবগত আছেন।

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গটি তোলেন। আগের এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের গুরুত্ব, বিশেষ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন ওই সাংবাদিক। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপটিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কীভাবে দেখছে, তা জানতে চান তিনি।

জবাবে পিগট বলেন, ‘আমি এতটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ এবং এর নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটিকে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে নিষিদ্ধ করেছে, তা আমরা অবগত। আমরা বাংলাদেশে এককভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে অন্য দলের চেয়ে বেশি সমর্থন করি না। আমরা একটি অবাধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সব মানুষের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করাকে সমর্থন করি। সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সংগঠনের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

লস্কর-ই-তাইয়েবার একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সাক্ষাৎ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে বলে দাবি করেন ওই সাংবাদিক। এ প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানতে চান, উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকাকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে পিগট কীভাবে দেখছেন।

জবাবে পিগট বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আবার এক ধাপ পেছনে ফিরে পোডিয়ামে বলা আগের কথাগুলোই পুনরুচ্চারিত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের বেশি পুরোনো সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে মূল্যবান বলে মনে করি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার মধ্য দিয়ে সে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও গভীর করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমি আপনার অন্য প্রশ্নের জবাব ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি, এখানে আর কিছু যোগ করার নেই।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে নিয়ে ভারতীয় অনলাইন পোর্টাল ‘নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৪ এপ্রিল নিউজ অ্যারেনা ইন্ডিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সম্পর্কে একাধিক মিথ্যা, মানহানিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিযোগ উত্থাপন করেছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মিটস টপ লস্কর-ই-তাইয়েবার অপারেটিভ পোস্ট জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর অ্যাটাক’। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর লস্কর-ই-তাইয়েবার একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাক্ষাৎ করেছেন, যা পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক।

প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের ভুল পরিচয়ে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে বৈধভাবে পরিচালিত আলেম ও ইসলামি সংগঠনগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিবেদনে যাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হেফাজতে ইসলামের নেতা, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত নন।

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে হাজার হাজার হেফাজত সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা ও সাজানো মামলার শিকার হন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিচার ও আইনি সংস্কারের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আসিফ নজরুল তাঁর দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে হেফাজতের এই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের আবেদন শুনতে হেফাজতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর উপদ ষ ট সরক র র উল ল খ আওয় ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই স্মৃতি উদযাপনে মেলার অনুমতি চেয়ে ডিসির কক্ষে অবস্থান

জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই স্মৃতি উদযাপন কমিটির ব্যানারে মাসব্যাপী প্রদর্শনী ও বিভিন্ন দোকান বসানোর অনুমতি দিতে খুলনার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের কক্ষে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনপিপির নেতাকর্মীরা। 

রোববার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে ছিলেন তারা। পরে সচিব বরাবর আবেদনের কথা জানিয়ে তারা কক্ষ ত্যাগ করেন।

নগরীর শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে জুলাইকেন্দ্রিক অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে  শিববাড়ী মোড়ের জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের ফাঁকা জায়গায় জুলাই মঞ্চ, জুলাই কর্নার, প্রদর্শনী, এলইডি স্কিনে প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে বই, দেশীয় কুটির শিল্প, সংস্কৃতি ও খাবারের স্টল দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অতীতে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন মূল আয়োজকরা।

দুপুর ১২টার দিকে নেতাকর্মীরা খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। জেলা প্রশাসক তাদের মেলার আয়োজন করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন। এ সময়  ছাত্রনেতারা জুলাই নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসককে  ফ্যাসিস্টের দোসর এবং অনুমতি না দিলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কক্ষের মেঝেতে বসে পড়েন। সেখানেই বসে তারা অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র লেখেন। পর্যায়ক্রমে সেখানে উপস্থিত হন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ওয়াহিদুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব ও এনপিপির সংগঠক সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর, কদরুল হাসান, রুমি রহমান, সানজিদা আঁখিসহ অনেকে। কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন তারা।

বিকেল ৪টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জুলাই নিয়ে আমরাও খুলনায় মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছি। কর্মসূচিতে জুলাই স্মৃতি প্রদর্শনী ও দেশীয় স্টল থাকবে। মেলা শব্দটি সবাই নেতিবাচক হিসেবে নেয়। জেলা প্রশাসকের মেলা বসানোর শব্দটি কটূক্তির মতো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি একা একা মেলার অনুমতি দিতে পারি না। এটা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের নামে মেলার আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সংগঠকরা। সংগঠনের মহানগর সভাপতি আল শাহরিয়ার বলেন, আগে ৭১ ও বিজয় দিবসের নামে জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলা হয়েছে, এখন মেলা হচ্ছে জুলাই স্মৃতির নামে। এই আয়োজন আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাসজুড়ে আলোচনা সভা, দোয়া, শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময়, জুলাই ক্যালেন্ডার বিতরণ, শহর পরিষ্কার, পথনাটকসহ মোড়ে মোড়ে প্রদর্শনীর  পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আলোচনা না করেই যারা মেলার আয়োজন করেছে, তাদের উদ্দেশ্য জুলাই স্মৃতি রক্ষা নয়, অন্য কিছু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ