আন্দোলনে যোগ দিতে ২৫টি বাসে কাকরাইলে এসেছেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
Published: 15th, May 2025 GMT
চার দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন আজ আরও বেগবান হয়েছে। আন্দোলন বেগবান করতে ক্যাম্পাস থেকে বাসে করে কাকরাইল মোড়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি বাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসেছেন। ক্যাম্পাস থেকে কিছুক্ষণ পরপর বাস ছাড়ছে কাকরাইলের উদ্দেশ্যে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে একে একে ২৫টি বাস, যার মধ্যে ৩টি ছিল দোতলা, কাকরাইল মোড়ে এসে পৌঁছায়। এসব বাসে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন। আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক ও কাকরাইল মসজিদ সংলগ্ন এলাকা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়’, ‘বাজেট কাটছাঁট চলবে না’, ‘হামলার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান করছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী ক্লান্ত হলেও আন্দোলন থেকে সরেনি কেউ। কেউ কেউ রাতভর রাস্তায় ঘুমিয়ে আজ সকালেও অবস্থান করছেন।
রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বুধবার থেকে একবিন্দু না নড়ে রাস্তায় আছি। কেউ বাসায় ফিরে যায়নি। চারটি ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সাবেক শিক্ষার্থী এবং জবি বিএনসিসির সাবেক ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের না, পরবর্তী প্রজন্মের জবিয়ানদের ভবিষ্যতের জন্য লড়ছি। দয়া করে আমাদের আন্দোলনকে রাজনীতি বলে চালিয়ে দেবেন না। এটা ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই।’
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও বাস্তবায়ন, ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.
বুধবার বেলা ১১ টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করে শিক্ষক শিক্ষার্থী। লং মার্চটি গুলিস্থান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছলে পৌনে ১টার সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
পরে রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সামনে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিফ্রিং করতে আসেন। তাঁর বিফ্রিংয়ে অসন্তুষ্ট হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বক্তৃতার একপর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বোতল ছুড়ে মারেন একজন। উপদেষ্টা বিফ্রিং বন্ধ করে চলে যান।
এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে করছেন শিক্ষার্থীরা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ, জার্মানিতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি
ইউরোপজুড়ে কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মহাদেশটির দক্ষিণাঞ্চলে গরম ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে। জার্মানিতে রেকর্ড তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ইতালি, স্পেন ও গ্রিসের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছেই না।
প্রচন্ড গরমে সতর্কতা হিসেবে পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। জার্মানি বিভিন্ন শহরে কয়েকদিন ধরে রাস্তাঘাটে লোকজন কম দেখা যাচ্ছে। অনেক স্কুল বন্ধ বা তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হচ্ছে। শীতল অনুভূতি পেতে জলাশয়ের ধারে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেক অঞ্চলে তাপপ্রবাহ সংক্রান্ত সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এবং তা রেডিও–টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছে।
জার্মান আবহাওয়া সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞের মতে, তীব্র তাপপ্রবাহের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। জার্মান আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়াবিদ মার্কো মানিত্তা সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন, ‘এই সময়ে, অর্থাৎ জুলাইয়ের শুরুতে, এমন তাপপ্রবাহ আগেও হয়েছে। তবে এবারের তাপমাত্রাটা অস্বাভাবিকভাবে তীব্র।’
অস্বাভাবিক তাপমাত্রার একাধিক কারণের মধ্যে রয়েছে—বায়ুমণ্ডলের ওপরের অংশে একটি শক্তিশালী উচ্চচাপ বিরাজ করছে; সূর্যকিরণ অনেক বেশি সময় ধরে থাকছে; সূর্যের অবস্থান অনেক উঁচুতে থাকার কারণে দিনের আলোও দীর্ঘ হচ্ছে; দীর্ঘ সময় ধরে দিন থাকার কারণে ভূপৃষ্ঠ যত তাপ গ্রহণ করছে, তার চেয়ে কম তাপ বিকিরণ করছে।
মার্কো মানিত্তা বলেন, এই সবকটি উপাদান একসঙ্গে মিলে তাপপ্রবাহ সৃষ্টি করছে। একে ‘হিট কাপ’ বা ‘হিট ডোম’ বলা হয়। এতে মেঘ গঠনের সুযোগ কমে যায় এবং সূর্য সরাসরি মাটিতে তাপ ছড়ায়। একই সঙ্গে বায়ুচাপ গরম বাতাসকে নিচে ঠেলে দেয়, ফলে বাতাস আরও গরম হয় এবং গরম বাড়ে। এই ‘হিট কাপ’ অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এর বিপরীতে, যেসব উপাদান ঠান্ডা প্রভাব ফেলতে পারে—যেমন সাহারা মরুভূমির ধুলাবালু, ভেজা বা আর্দ্র মাটি, ঠান্ডা পানির উৎস, এগুলো এখন কমে গেছে।
জার্মান আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুসারে, এই সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছাবে। জার্মানিতে স্থানভেদে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে জার্মান জুড়ে তাপমাত্রা রয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার হতে পারে এবারের গ্রীষ্মের সবচেয়ে গরম দিন। তবে ভালো খবর হলো বৃহস্পতিবার থেকে গরম কিছুটা কমবে।
ইতালির ‘কারোন্তে’ নামের উচ্চচাপ অঞ্চল দেশটিতে বহুদিন ধরে প্রচণ্ড গরমের সৃষ্টি করছে। রোম, ফ্লোরেন্স, বোলোনিয়া ও পেরুজিয়ায় তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৭টি শহরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। পুগলিয়া, বেসিলিকাতা ও সিসিলিতেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টার পর্যন্ত কৃষি ও নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আফ্রিকা থেকে আসা গরম বাতাস স্পেনে গ্রীষ্মের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে এনেছে। সেভিয়া, সারাগোসা ও অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। স্পেনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দেশটিতে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছাতে পারে। মায়োর্কায় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও উচ্চ আর্দ্রতার কারণে আরও বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
গ্রিসে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ানোর পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। দেশটিতে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান বন্ধ রাখা হয়েছে। অনেক এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। তবে গ্রীসের ক্রেট ও এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সমুদ্রের বাতাসের কারণে কিছুটা ঠান্ডা পরিবেশ রয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।