চট্টগ্রামের রাউজানে একটি খাল খননকাজ বন্ধের পর জানা গেছে, চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদার ও তাঁর লোকজনকে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে ঠিকাদারকে হত্যার হুমকিও দেয়। প্রাণভয়ে তিনি যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। ১২ মে উপজেলার কাঁশখালী খালের খননকাজ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র ও বিএডিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সোমবার বিষয়টি জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের নাম কেউ জানাতে পারেননি।

সূত্র জানায়, স্থানীয় কৃষকের সুবিধার জন্য বিএডিসি কাঁশখালী খালের চার কিলোমিটার খননে দরপত্র আহ্বান করে। কার্যাদেশ পেয়ে গত এপ্রিলে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কিলোমিটারে খনন ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।

কাঁশখালী এলাকার কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুর শুক্কুর বলেন, কাঁশখালী খালের দুই পাড়ে প্রায় ৫০ একরের বেশি কৃষিজমি। শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে গেলে তাদের সেচসংকটে পড়তে হয়। বিএডিসির খাল খননের কাজ জারুলতলা থেকে শুরু হয়েছিল। কাঁশখালীকুল, শরীফপাড়ায় খননকাজ শেষে হাজীপাড়া এলাকায় এসে কাজ থেমে গেছে। এখনও দেড় কিলোমিটার খনন বাকি। কিন্তু খননযন্ত্র নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো.

সোহেলের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।

 উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, কাঁশখালী খাল খননের কাজ প্রায় তিন কিলোমিটার শেষ হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন, হেলমেট পরা তিন-চার সন্ত্রাসী ১২ মে ঠিকাদারের লোকজনকে মারধর করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিয়ে কাজ করলে হত্যা করা হবে বলে ঠিকাদারকে মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তারা ভয়ে কাজ বন্ধ করে খননযন্ত্রসহ সরঞ্জাম নিয়ে চলে গেছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এড স

এছাড়াও পড়ুন:

মহাস্থানে পাওয়া প্রাচীন শিলালিপি ৯৪ বছর ধরে কলকাতায়, বাংলাদেশে কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে

রাজধানীর বাংলা একাডেমি ভবনের নিচতলায় পশ্চিম পাশে জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর। সেখানে দেশের প্রাচীনতম একমাত্র ব্রাহ্মীলিপি খচিত একটি প্রস্তরখণ্ডের ছবি রয়েছে। ছবির নিচে লেখা—‘মহাস্থান (বগুড়া)-তে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি’। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রাচীনতম লিপিসংবলিত প্রস্তরখণ্ডটি থাকার কথা ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে অথবা বগুড়ার মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি জায়গার কোথাও সেটি নেই।

তাহলে শিলালিপিটি কোথায় আছে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। তিনি জানালেন, শিলালিপিটি রয়েছে কলকাতায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। এ তথ্যের ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতায়। সেখানকার প্রত্নতত্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে করেন শিলালিপিটি তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে।

মহাস্থানগড়ে শিলালিপিটি খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৩১ সালে, তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। ছিল না জাতীয় জাদুঘর বা প্রত্নতত্ব বিভাগ নামে কোনো দপ্তরের অস্তিত্ব। তখন ভারত ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। সেসময় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণের জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনিক দপ্তর ছিল কলকাতায়। ফলে শিলালিপিটি নিয়ে যাওয়া হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লুট হওয়া বা ঔপনিবেশিক আমলে উৎস দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ বিনিময় বা সেগুলো উৎস দেশে ফেরত আনার চর্চা বাড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের প্রাচীনতম এই শিলালিপি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার উদ্যোগী হলে প্রাচীন এই প্রত্নসম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব কি না?

মহাস্থানগড় থেকে যেভাবে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ‘মহাস্থান’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা থেকে জানা যায়, শিলালিপি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর।

ওই প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ১৮৭৯ সালে মহাস্থানগড়ে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ও প্রত্নতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার কানিংহাম। এরপর সেসময়ের গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কে সি নন্দীর তত্ত্বাবধানে ১৯০৭ সালে দ্বিতীয় দফায় খননকাজ চলে। যদিও সেটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ ছিল না। পরে ১৯২০ সালের ২২ নভেম্বর মহাস্থান গ্রামের গড়সহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় খননকাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন সরকার। এর প্রায় আট বছর পর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রথম তত্ত্বাবধায়ক কে এন দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৯২৮–২৯ সালে আরও একটি খননকাজ পরিচালিত হয়। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময়ে বহু নির্দশন পাওয়া গেলেও ব্রাহ্মীলিপি খচিত ওই শিলা পাওয়া যায়নি।

মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।

মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।

সে সময় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধায়ক জি সি চন্দ্র এটি অধিদপ্তরের জন্য সংগ্রহ করেন এবং কিছুদিন কলকাতায় তাঁর কার্যালয়ে রাখেন। পরে সংস্থার মহাপরিচালকের আদেশে এটিকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব শাখায় জমা করা হয়।

জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘরে রাখা শিলালিপির ছবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মহাস্থানে পাওয়া প্রাচীন শিলালিপি ৯৪ বছর ধরে কলকাতায়, বাংলাদেশে কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে