মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে হত্যার হুমকি ঠিকাদারকে
Published: 19th, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে একটি খাল খননকাজ বন্ধের পর জানা গেছে, চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদার ও তাঁর লোকজনকে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে ঠিকাদারকে হত্যার হুমকিও দেয়। প্রাণভয়ে তিনি যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। ১২ মে উপজেলার কাঁশখালী খালের খননকাজ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র ও বিএডিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সোমবার বিষয়টি জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের নাম কেউ জানাতে পারেননি।
সূত্র জানায়, স্থানীয় কৃষকের সুবিধার জন্য বিএডিসি কাঁশখালী খালের চার কিলোমিটার খননে দরপত্র আহ্বান করে। কার্যাদেশ পেয়ে গত এপ্রিলে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কিলোমিটারে খনন ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।
কাঁশখালী এলাকার কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুর শুক্কুর বলেন, কাঁশখালী খালের দুই পাড়ে প্রায় ৫০ একরের বেশি কৃষিজমি। শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে গেলে তাদের সেচসংকটে পড়তে হয়। বিএডিসির খাল খননের কাজ জারুলতলা থেকে শুরু হয়েছিল। কাঁশখালীকুল, শরীফপাড়ায় খননকাজ শেষে হাজীপাড়া এলাকায় এসে কাজ থেমে গেছে। এখনও দেড় কিলোমিটার খনন বাকি। কিন্তু খননযন্ত্র নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদারের লোকজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো.
উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, কাঁশখালী খাল খননের কাজ প্রায় তিন কিলোমিটার শেষ হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন, হেলমেট পরা তিন-চার সন্ত্রাসী ১২ মে ঠিকাদারের লোকজনকে মারধর করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিয়ে কাজ করলে হত্যা করা হবে বলে ঠিকাদারকে মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তারা ভয়ে কাজ বন্ধ করে খননযন্ত্রসহ সরঞ্জাম নিয়ে চলে গেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এড স
এছাড়াও পড়ুন:
সামিউরকে কেন হত্যা করা হলো, নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন পাতাম রেস্টুরেন্ট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সামিউর রহমান (আলভি)। হঠাৎ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত দল এসে রড, লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর শুরু করে। মারধর থেকে বাঁচতে দৌড় দিয়ে রাস্তার অপর পাশের একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লে সেখানেই তাঁকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। আর তাতেই মারা যান সামিউর। তবে তাঁকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো, সেটা পরিষ্কারভাবে বলতে পারছেন না তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পুলিশও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্য পায়নি।
দুর্বৃত্ত দলের সদস্যরা পাশের এলাকা রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে এসেছে বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ওই দুর্বৃত্ত দল ওই এলাকায় সক্রিয় এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনুসারী বলে জানা গেছে। অপর দিকে সামিউর যাঁদের সঙ্গে জিগাতলায় আড্ডা দিতেন, তাঁরা কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত কি না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত করে তথ্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ বলছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে সামিউরকে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। হত্যায় জড়িত থাকা সন্দেহে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, সামিউরের এক বন্ধুর সঙ্গে সাব্বিরের কয়েক দিন আগে মারামারি হয়। তাতে সাব্বিরের এক অনুসারী বেশ আহত হয়। যার জেরে শুক্রবার জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন ধানমন্ডি লেকপাড় এলাকায় সামিউর ও তাঁর বন্ধুদের ওপর হামলা করে সাব্বিরের অনুসারীরা। হামলার এক পর্যায়ে সামিউর ও তাঁর বন্ধুদের লেকপাড় থেকে ধাওয়া করে জিগাতলায় দারোগা মার্কেটের পাশের গলির ভেতরে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে নিয়ে যায়। সেখানেই সামিউরকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে সঙ্গে থাকা বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁর বন্ধু আশরাফুল, ইসমাইল হোসেন, জাকারিয়া ও দৃশ্যকেও মারধর করা হয়। তবে তাঁদের আঘাত গুরুতর না হওয়ায় হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তাঁরা।
সামিউর রহমান ধানমন্ডির ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। থাকতেন হাজারীবাগ বিডিআর ৫ নম্বর গেট এলাকায় বাসের আলী কলোনিতে। তাঁর বাবা মশিউর রহমান ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চার ভাইবোনের মধ্যে সামিউর ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট তিন বোন রয়েছে। তাঁরা মামার বাসায় ভাড়া থাকেন। সামিউরের মামি মাহিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সামিউর পড়াশোনার পাশাপাশি গুলিস্তানে একটা ট্রাউজারের দোকানে কাজ করত। কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াত না। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সকাল থেকেই সামিউর বাসায় ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে জিগাতলায় যায়। বন্ধুদের সঙ্গে থাকার কারণে সামিউর আক্রমণের শিকার হয়েছে।
যেখানে সামিউরকে মারা হয়েছে, সেখানকার একটি বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘রাতে যখন ওই ছেলেকে মারধর করা হয়, তখন আমি ডিউটিতেই ছিলাম। ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল ছেলেটাকেসহ (সামিউর) কয়েকজনকে মারধর করে। সবার হাতে রড, চাকু ছিল। ৫ মিনিটের মধ্যেই মারধর শেষ করে ওরা চলে যায়। আমি ছেলেটাকে ধরে রিকশায় তুলে দিই। পরে শুনেছি ছেলেটা মারা গেছে।’ তিনি জানান, যারা মেরেছে, তাদের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি।
এদিকে হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই শত্রুতা ছিল। এ ঘটনায় সামিউরের বাবা মশিউর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। আমরা কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে।’