‘দুই দিন পর পরই আন্দোলন। কিছু হলেই সড়ক অবরোধ। গ্রীষ্মের গরম। রিকশাও মিলছে না। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত। এই শহরে সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নেই। আমাদের মতো মানুষের সময়ের কোনো দাম নেই।’

মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাটগামী যাত্রী সালেহা বেগম কথাগুলো বলছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবিতে নগর ভবনের সামনে হাজারো নেতাকর্মী ষষ্ঠ দিনে মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে ওই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সালেহা বেগমের মতো সাধারণ মানুষ।   

জাকির হোসেন নামে আরেক পথচারী বলেন, “মিরহাজীরবাগ থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। পথে দুই ঘণ্টা একই জায়গায় যানজটে আটকে আছি। সকাল সাড়ে ৯টায় বাসে উঠেছি, যেতে চেয়েছি উত্তরা। গুলিস্তান পৌঁছাতে দুপুর সাড়ে ১২টা। এমন বিশৃঙ্খলায় সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টা থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা পীর ইয়ামিন মার্কেট ও মাজার গেট থেকে পুলিশ হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দেয়। স্লোগান, গান ও মিছিলের মাধ্যমে তারা ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান।

আন্দোলনকারীরা বলেন, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন এবং দ্রুত শপথ না হলে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সড়ক অবরোধের কারণে বিকল্প রুটেও যানজট বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ট্রাফিক পুলিশের উপ পরিদর্শক সাদেক হোসেন বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। তবে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চললে যানজট এড়ানো কঠিন।” 

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।

সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক হোসেন।
গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.

নুরুল ইসলাম।

আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাককে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় আন্দোলন করে আসছেন তার সমর্থকরা।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ জ ট প রক শ ইশর ক হ স ন য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জের ক্যাথল্যাব যাবে চমেক হাসপাতালে

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপনের চার বছর পরও চালু করা যায়নি দুটি ক্যাথল্যাব। এরই মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম। তারা ক্যাথল্যাবটি যারা চালু করতে পারেননি, তাদেরকেই এ জন্য দায়ী করেছে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হৃদরোগীদের সুবিধার জন্য এই হাসপাতালে ১৯ কোটি টাকা খরচে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচটিএমএস ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ট্রেড হাউস এখানে ক্যাথল্যাব দুটি স্থাপন করে। যদিও তারা সেগুলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়নি ওয়াশরুম। দক্ষ লোকবলের না থাকায় চার বছরেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করা যায়নি।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ক্যাথল্যাব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মো. শাহাদত হোসেন কবির ৮ মে এক পরিপত্রে এ নির্দেশ দেন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক রোগীকে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্য থেকে উপযুক্ত একটি চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। 
এতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার, নিমিউ অ্যান্ড টিসি প্রয়োজনীয় কারিগরি পরামর্শ ও সহায়তা দেবেন।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ হাসপাতালে ৮০ শয্যার সিসিইউ রয়েছে। এখানে হৃদরোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের জন্য ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ক্যাথল্যাব স্থাপন করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও দক্ষ লোকবল সংকটে ক্যাথল্যাবগুলো চালু করা যায়নি। একটি ক্যাথল্যাব চালু হলে মাসে ৫০-৬০ জন মুমূর্ষু হৃদরোগীর এনজিওগ্রাম করা সম্ভব। এতে সরকারি খরচেই তারা হার্টে রিং পরাতে পারবেন।
এমনিতেই এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এর মধ্যে অব্যবহৃত দুটি ক্যাথল্যাবের একটি সরিয়ে নেওয়াকে মহাবিপদ হিসেবে দেখছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার দায়ভার তাদের ওপরই পড়ে, যারা দীর্ঘদিনেও ক্যাথল্যাব দুটি চালু করতে পারেননি।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলামের দাবি, তিনি যোগ দেওয়ার পর ক্যাথল্যাব দুটি চালুর উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে তিনজন নার্স ও দু’জন টেকনিশিয়ানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ক্যাথল্যাব চালুর আশ্বাস দেন। সেটি দিয়েই রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব। একটি ক্যাথল্যাব মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চমেক হাসপাতালে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আদেশ কাল
  • ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা: রিটের শুনানি শেষ, আদেশ বুধবার
  • নোবিপ্রবিতে গবেষণা মেলা ২২ জুন
  • ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানি দুপুরে
  • ভারত-চীন সংঘর্ষে নিহত কর্নেলের চরিত্রে সালমান
  • ভবনের কাজ শেষ না করে আত্মগোপনে ঠিকাদার
  • ১৫৫ টাকার জন্য হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন
  • কেরানীগঞ্জে শিশু ধর্ষণের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন, এক লাখ টাকা জরিমানা
  • মানিকগঞ্জের ক্যাথল্যাব যাবে চমেক হাসপাতালে