প্রবল পানির তোড়ে ভেঙে গেছে আত্রাই বাঁধের ভারতীয় অংশ। মঙ্গলবার সকালে বাঁধটি ভেঙে গেছে। 

আত্রাই নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের অভিযোগ ছিল নদীটিতে বাংলাদেশের পক্ষে রবার বাঁধ দেওয়ার কারণে ভারতীয় অংশ বারবার বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বছর থেকে নদীতে প্রায় ৩০ কোটি রুপি ব্যয়ে ছোট আকারে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করে ভারত। কিন্তু কাজ চলাকালে গত ফেব্রুয়ারিতেই বন্যার পানির তোরে বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষে জোরশোরে চলছিল মেরামতের কাজ।

মঙ্গলবার সকালে মেরামত অংশ আবার ভেঙে পড়ায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই টানা বৃষ্টিতে আত্রাই নদীর পানির স্তর বেড়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে পানি বেড়েই চললে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো পানি তলায় চলে যাবে বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী।

নদীটি যেহেতু ভারত হয়ে বাংলাদেশে আবারও প্রবেশ করেছে, সেক্ষেত্রে নদীতে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘটনার পরই বাঁধটি পরিদর্শন করে দক্ষিণ দিনাজপুরের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। 

বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “বাড়ি তৈরির টিএমটি রড ব্যবহার করে ড্যাম তৈরি হয়েছে। এটি চরম দুর্নীতির ফল। আমি চাই প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হোক। ড্যাম নির্মাণে প্রচুর টাকা নেতাদের ঘুষ হিসেবে গিয়েছে, যার ফলেই আজ এই বিপর্যয়।”

অন্যদিকে, বালুরঘাট মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এই ভাঙনকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলেন, “এই ভাঙনের পেছনে কোনেনা মানুষের হাত নেই। দুর্নীতির অভিযোগ তোলার আগে বিজেপিকে নিজের ঘরে নজর দিতে হবে। বালুরঘাট রেলস্টেশনে তৃতীয় শ্রেণীর লিড ব্যবহার করে যে কাজ হচ্ছে, সেটি কি দুর্নীতি নয়?”

তিনি আরো বলেন, “রাম মন্দির তৈরির পরই ছাদ থেকে জল পড়ছে- এটাও তো দুর্নীতি। সেখানেও তো বিজেপি চোখ বুজে আছে।”

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের মাঝে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন আত্রাই নদী পারের গ্রামবাসীরা। বাঁধের দ্রুত সংস্কার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মেলায় ক্ষোভও বাড়ছে জনমনে।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

পানি নিয়ে ‘অমৃত’র অনাচার

ভূগর্ভের পানি তুলে বোতলজাত করে ব্যবসা করছে ‘অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট’ নামে একটি কোম্পানি। বাবুগঞ্জের রহমতপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে কারখানার জন্য একটি গভীর নলকূপের অনুমোদন নেয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটারের অনুমতি নিয়ে আরও তিনটি কূপ স্থাপন করে এক লাখ লিটার পানি তুলে বিক্রি শুরু করে। পানি নিয়ে অমৃতের এ অনাচারে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 
পানির জন্য হাহাকার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন, কারখানা নির্মাণ এবং এসবের জন্য পানির চাহিদা মেটাতে বাবুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসানো হয়েছে। এতে পানির স্তর নেমে গেছে। ৮০ ভাগ নলকূপ এখন অকেজো। আগে যেখানে ৭৫০ থেকে ৮০০ ফুট নিচে গেলে নলকূপে মিলত বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন সাড়ে ৯০০ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি তোলা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছয় ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রামে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মাধবপাশা ইউনিয়নের। এখনই পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাজুড়ে পানির হাহাকার আরও বাড়বে। 
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুমন বলেন, অমৃত গ্রুপ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে কিনা, সেটি তদন্তের পর সত্যতা পেলে কেবল সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে; এর আগে নয়। 
এদিকে, পানি নিয়ে অমৃতের অনাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী এম মাসুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, অমৃত গ্রুপ সরাসরি ভূগর্ভ থেকে মোটা পাইপ ও পাম্পের সাহায্যে লাখ লাখ লিটার পানি তুলে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাদের বলা হয়েছে, পানি বিক্রির ব্যবসা চালাতে হলে নদী কিংবা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ৯ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 
মাধবপাশা ইউনিয়নের পূর্ব পাংশা গ্রামের শাহনাজ পারভীনের অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। আশপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। কিছুদিন ফিটকিরি দিয়ে, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পুকুরের পানি পান করেছেন। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে সিকদারবাড়ির হাউজিংয়ের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও কয়েকবার চাপার পর নলকূপ থেকে পানি ওঠে। 
যেভাবে অনিয়মের শুরু
মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে দেড় যুগ আগে অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু। প্যাকেট গুঁড়া মশলা, বোতলজাত সরিষার তেল বাজারজাত করত প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালে ওয়ারপো থেকে যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বোতলজাত (অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটার) পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। পুরোনো কারখানার এক পাশে ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করে তারা। প্রথমে একটি ছয় ইঞ্চি ব্যাসের কূপের অনুমোদন নিয়ে পরে অবৈধভাবে আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও চারটি কূপ থেকে গড়ে এক লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করেছে। অভিযোগ পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় ওয়ারপো পরিদর্শক টিম। 
যা বলছে ওয়ারপো
সমকালের পক্ষ থেকে ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৯৬০ ফুট গভীরতায় ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপের সাহায্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছিল। ১৬ হাজার লিটার পানি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আরও তিনটি কূপের মাধ্যমে ৮০ হাজার লিটার পানির জন্য আবেদন করে। এ আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এরপরও তারা বড় একটি কূপ থেকে ৩৫ হাজার লিটার পানি তুলছে এমন প্রমাণ পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। 
ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম রয়েল বলেন, অনুমোদনের আগে অন্য কোনো কূপ থেকে পানি তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অমৃত গ্রুপকে সাবধান করা হয়েছে। 
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অমৃতের প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ। তাঁর দাবি, ১৬ হাজারের অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন ১৪ হাজার লিটার পানি আহরণ করছেন। এতে এলাকাবাসীর টিউবওয়েলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি পানি সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করছে। তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র অমৃত গ্রুপের হেড অফিসে রক্ষিত আছে বলে দাবি তার। 
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বা অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদা ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানা নেই। 
ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অমৃত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোন প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ পানি ভূগর্ভের উৎস থেকে তুলেছে, তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ